মোরেলগঞ্জের শিক্ষা ব্যাবস্থার নাজুক দশা


উপজেলা প্রতিনিধি, মোরেলগঞ্জ প্রকাশের সময় : ২২/০৩/২০২৩, ১:৫৫ অপরাহ্ণ /
মোরেলগঞ্জের শিক্ষা ব্যাবস্থার নাজুক দশা

বেশ কিছু দিন ধরে “মোরেলগঞ্জের শিক্ষার মান উন্নয়ন” বিষয়ের উপর কিছু প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, কলেজ, শিক্ষা প্রতিষ্টানের চলমান কার্যক্রমের উপরে একটি জরিপ চালানো হয় তার মধ্যে বর্তমানে মোরেলগঞ্জের বেশ নামিদামি কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে সেসকল প্রতিষ্ঠানের কর্তব্যরত শিক্ষকদের (১০০%) এর মধ্যে (৭৫%) শিক্ষকের শ্রেণিকক্ষে দেয়া লেকচার শিক্ষার্থীরা বুঝতে সক্ষম হচ্ছে না। অথচ এসকল বিষয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কোন মাথা ব্যাথা নেই বল্লেই চলে।রিতিমতো ক্লাস না নেয়ার অভিযোগও এ জরিপে উঠে এসেছে। শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়েই স্ব স্ব স্কুলের ও কলেজের শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট পড়ছেন।

তবে এসকল শিক্ষকদের নিকট প্রাইভেট পড়ার পরেও তারা প্রকৃত শিক্ষা পাচ্ছেন না, বরংচ মাসের পর মাস গুনতে হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। অভিভাবকেরা বলছেন অন্যকথা।তারা মাসের পর মাস ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার পিছনে ব্যাপক টাকা খরচ করে চলেছেন, তার মধ্যে কলেজের ফিস, প্রাইভেট ফিস, যাতায়াত ভাড়া, টিফিন খরচ, এটা সেটা বিভিন্ন অনুষ্টানের চাঁদা ইত্যাদি ইত্যাদি। এতো কিছুর পরেও বছর শেষে দেখা যাচ্ছে তাদের আদরের সন্তানটি বেশ কয়েকটি সাবজেক্টে অকৃতকার্য হয়েছে এ বিষয়টি নিয়ে হতাশ, অভিভাবক।

উপজেলার ছোট বড় প্রায় ১০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান উন্নয়ন বিষয়ে একটি জরিপ করে দেখা যায়, এসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কখনই উপজেলা শিক্ষা অফিসারের পা পড়েনি। কোন প্রকার তদারকি কিংবা বাধ্যবাধকতা ছাড়াই নিজস্ব খেয়াল খুশি মতো চলছে এসব প্রতিষ্ঠান। উপজেলা শিক্ষা অফিসের হস্তক্ষেপ ছাড়াই এসকল প্রতিষ্ঠানের প্রধান কোন প্রকার জবাবদীহিতা ছাড়া দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন দীর্ঘবছর যাবৎ।

জরিপে আরো উঠে এসেছে,বেশ কিছু শিক্ষার্থীরা সারা বছরে মাত্র কয়েকটি ক্লাসে উপস্থিত হয়েছেন, তবে এদের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী দরিদ্র এমনকি এদের বাড়িঘর ১০/১৫ কিলোমিটারের বেশি দুরে হওয়ার কারনে ও সড়কপথ অত্যন্ত খারাপ হওয়ায় তারা যাতায়াত করেন নদী পথে ট্রলার যোগে। কিছু এলাকার সড়কপথ থাকলেও তা চলাচলের একদম অনুপোযোগী যার কারনে যথা সময়ে প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হতে না পারার কারনও উঠে আসে এ জরিপে।

শিক্ষাপ্রতিষ্টান গুলোর আশেপাশে খোজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় সময়ই ক্লাস চলাকালীন শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানের অাশপাশের দোকান বা বাজারগুলোতে অযথা আড্ডা মারতেও দেখা যায়, কিন্তু এসকল বিষয়ে প্রতিষ্টান প্রধানদের কোন প্রকার প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিতে দেখেন নি কেউ।

এছাড়াও জরিপে আরও উঠে আসে, কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক ক্ষমতাবল প্রয়োগ করে কিছু শিক্ষক নিজ খেয়াল খুশিমতো চলছেন, এমনকি কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলোর বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই অপরাজনীতির সাথে জড়িত, এমনকি সে সকল প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক লিডার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এসকল রাজনৈতিক লিডারদের ভয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধান কোন প্রকার এ্যাকশনে যেতে পারছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে অনেকের। এমনও রয়েছে যে, রাজনৈতিক ক্ষমতাবল প্রয়োগ করে শিক্ষার্থীদের চলমান ক্লাসে লেকচার রতো শিক্ষকের সামনে দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের রাজনৈতিক মিটিং মিছিলে যোগ দিতে বাধ্য করে নিয়ে যায় প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি করা কিছু নেতা। এসকল বিষয়ে ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে রাজি নন। তাছাড়াও এসব বিষয়ে কোন প্রকার হস্তক্ষেপ বা বাধা প্রদান করলে শিক্ষকদের রাজনৈতিক নেতাদের হুমকি ধামকি শুনতে হয়।

সর্বশেষ জরিপে উঠে এসেছে, কিছু প্রতিষ্টানের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার দুর্নীতি বিষয়ে ।নিয়ম বহির্ভুত ও অর্থের বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ দানে অনেকের অভিযোগ রয়েছে কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।ক্ষমতাধারী কিছু অসাধু ম্যানেজিং কমিটির বেক্তি এসকল কার্যক্রম করেছেন বলেও তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়াও উপজেলার ব্যাপক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানিজিং কমিটি রাজনৈতিক ক্ষমতাবলে করা হয়েছে বলেও অভিমত ব্যাক্ত করেন অনেকেই।

বর্তমানে” মোরেলগঞ্জের শিক্ষার মান কেমন?প্রশ্নের জবাবে শিক্ষানুরাগী বিশিষ্টজনেরা বলছেন, বর্তমানে মোরেলগঞ্জের কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্টানের শিক্ষা ব্যাবস্থা এতোটাই নাজুক যে, এই অবস্থায় এসকল প্রতিষ্টান থেকে জাতীর ভবিশ্যৎ বাছাই করে বের করা সম্ভব নয়, স্কুল কলেজের এমন ছন্নছাড়া ক্লাস ব্যাবস্থায় অভিভাবকের উদাসীনতায়,বর্তমান প্রযুক্তির এন্ড্রোডায়েড মোবাইল ফোনের উপর শিক্ষার্থীদের চরম আসক্তি জন্মেছে এবল ক্লাসে তেমন হোম ওয়ার্ক চাপ না থাকার ফলে শিক্ষার্থীরা বাসায় বসে বর্তমানের ফ্রি ফায়ার,পাবজি গেইমে আসক্ত হচ্ছে বলেও মতামত প্রকাশ করেন।

এছাড়াও শিক্ষকদের ক্লাস ফাকি দেয়া, যথা সময়ে প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত না হওয়া, উপজেলা শিক্ষা অফিসের তদারকি না করার বিষয়কেও দায়ী করেন তারা। উপরোক্ত সমস্যার সমাধানের উপায় কি? প্রশ্নে তারা বলেন,আমাদের মনে রাখতে হবে শুধুমাত্র একজন আদর্শমানের শিক্ষকই একটি শিক্ষা প্রতিষ্টানকে বদলে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। তবে কাজকে প্রতিষ্ঠানকে ভালবাসলে ভেতর থেকে কিছু করার তাড়না থাকলে সবই সম্ভব হয়, না থাকলে অজুহাত দিয়েই বাকি বছরগুলো কাটবে কিন্তু প্রতিষ্টানের কোন উন্নতি সাধিত হবেনা।

সন্মানিত পাঠক উপরে যে কথাগুলো বলেছি এটা শুধুমাত্র আমার একটি অনুসন্ধানীমুলক জরিপ,যা আমরা দীর্ঘ দুই মাস যাবৎ এ তথ্য সংগ্রহ করেছি, শুধু মাত্র সত্যটা পাঠক মহলে আনার জন্য, বর্তমানের মোরেলগঞ্জের শিক্ষা ব্যাবস্থা কেমন চলছে তা সবার একটু জানা দরকার। আশা করি আমার এ তথ্য গুলোয় কোন ভুলত্রুটি হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, মনে রাখবেন জবাবদিহিতা যতো বাড়ানো যাবে সমাজ দেশ থেকে ততো দুর্নীতি ফাঁকিবাজি দুর হবে। আর শিক্ষা ব্যাবস্থায় ফাকিবাজি মানে পুরো জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার। একটা কথা ভাবুন, আমি যদি নিজেই আবিস্কারক না হতে পারি তাহলে কোনও দিনও কি আমার শীষ্য বিঙ্গানী হতে পারবে?সেটা যেমন সম্ভব নয়, তেমনি লক্ষ টাকা উপঢৌকন দিয়ে নকল সার্টিফিকেট ধারী মেধাহীন অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দিলে তা হবে দেশের, সমাজের তথা জাতীর জন্য মারাত্বক ক্ষতি। যারা নিজেরাই কিছু জানেন না তারা কি শিক্ষা দিবেন আমাদের শিক্ষার্থীদের? তবে সব আদর্শ শিক্ষক সমাজকে আমি গভীর শ্রোদ্ধা করি শিক্ষকতা একটা মহান পেশা, কিন্তু এই মহান পেশাকে যারা ফাঁকিবাজি আর পয়সা কামানোর পথ হিসেবে গন্য করেন সেই সব নামধারী অযোগ্য শিক্ষককে আমি ধিক্কার জানাই। এসকল শিক্ষক শুধু একটা ছাত্রকেই ধংস করছেন না তারা ধংস করছেন জাতীর গোটা মেরুদন্ডকে।

সর্বশেষ আমি মনে করি, একটি আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়তে যেমন একজন আদর্শ শিক্ষকের বিকল্প নেই তেমনি দক্ষতানির্ভর শিক্ষাব্যবস্থাও অনেকটা গুরুত্বপুর্ন।বর্মানের নতুন শিক্ষাক্রম কার্যকরী করতে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শিক্ষকদের সক্ষমতা বাড়ানো। এই জায়গায় জোর দিতে হবে সরকারের শিক্ষা সমন্ধীয় সকল কর্মকর্তাদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান প্রধানদের।সর্বোচ্চ মনিটরিং বাড়াতে হবে শিক্ষকদের মাঝে জবাবদীহিতা বাড়াতে হবে।আর দারিদ্র শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ বৃত্তির আওতায় আনতে হবে। মিড-ডে মিল কর্মসূচি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

এছাড়াও সরকারকে শিক্ষায় আরও বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তবেই আমরা পাবো একটি সুন্দর সুষ্ঠু শিক্ষিত জাতী। যারা দেশকে পরবর্তী সময়ে সঠিক নেতৃত্ব দিতে পারবে, দেশের সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক ভুমিকা রাখতে পারবে।

পত্রিকা একাত্তর/ মোঃ নাজমুল