নিজ স্ত্রীকে খুন করে বনে গেছেন সাংবাদিক, তবে এটি তার পরিচয়ের ছদ্মবেশ। ১৭ বছর আত্মগোপনে ফেরারি থাকা হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আশরাফ হোসেন কামাল, ঠিকানা পাল্টিয়ে আত্মগোপনে ছিলো ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ায়। অপরাধ ঢাকতে পরিচয় দিতেন সাংবাদিক।
প্রযুক্তির ব্যাবহারের মাধ্যমে আত্মগোপনে থাকা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আশরাফ হোসেন কামাল কে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১১ এর অভিযানিক দল।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ ব্রিফিং এর মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, দীর্ঘ ১৭ বছর কামাল পলাতক ছিলেন। এসময় তিনি সাভারের আশুলিয়া প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক পরিচয় দিতেন। তিনি নারায়ণগঞ্জের একটি হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তার কাছ থেকে দৈনিক ‘সময়ের বাংলা’ পত্রিকার কার্ড উদ্ধা করা হয়েছে। তিনি এ পত্রিকার আশুলিয়া প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন।
তিনি আরো জানান,র্যাব সাইবার পেট্রোলিং এর মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হতে ফুটপ্রিন্ট সনাক্ত করে।অতঃপর মাঠ পর্যায়ে যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে আসামি শনাক্ত করতে র্যাব সক্ষম হয়। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১১ এর আভিযানিক দল গত ১৭ই ফেব্রুয়ারি
ঢাকা জেলার সাভার হতে আসামী আশরাফ হোসেন ওরফে কামাল(৪৭) কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। ঘটনা পর্যালোচন ও আসামির স্বীকারোক্তি মোতাবেক, গত ২০০৫ সনের ১লা ফেব্রুয়ারি রাতে তার ১৫ মাসের শিশুপুত্রের সামনে স্ত্রী সানজিদা আক্তার কে শ্বাসরোধে হত্যা করেন এবং তা আত্মহত্যা বলে চালানোর জন্য স্ত্রীর ওড়না গলায় পেচিয়ে সিলিং ফ্যানের সাথে লাশ ঝুলিয়ে রাখে। এসময় আসামী প্রচার করতে থাকে তার স্ত্রী গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এই বিষয়ে সোনারগাঁ থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়।
ঘটনাটি সন্দেহমূলক হওয়ায় কার্যবিধি ৫৪ ধারা মোতাবেক গ্রেপ্তারপূর্বক আদালতে প্রেরণ করা হয়। ১২দিন কারাভোগের পর শ্বশুর এর সহায়তায় জামিনে বের হয়। জামিন পাওয়ার পর হঠাৎ করে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। এ সময় তার নিজ স্থায়ী ঠিকানা নোয়াখালী, কর্মস্থল নারায়ণগঞ্জ, নিজ সন্তানসহ কোন আত্মীয়র সাথে যোগাযোগ রাখেনি।
এদিকে পোস্টমর্টেম সুরতহাল পর্যালোচনা করে জানা যায় স্ত্রীর সানজিদা আক্তার আত্মহত্যা করেনি তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। এতে পুলিশ বাদী হয়ে সোনারগাঁ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় একমাত্র আসামি আশরাফ হোসেন ওরফে কামাল।
সার্বিক তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আসামি মোঃ আশরাফ হোসেন ওরফে কামালকে ৩০২/২০১ ধারায় আদালত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দেয়।
উল্লেখ্য মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মোঃ আশরাফ হোসেন ওরফে কামাল নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ থানায় একটি সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে কর্মরত ছিলেন এবং ২০০৩ সালে সে সানজিদা আক্তারের সাথে বিবাহে আবদ্ধ হয়ে সস্ত্রীক কোম্পানির স্টাফ কোয়ার্টারে বসবাস শুরু করেন।
হত্যাকান্ড ঘটানোর পর সাভারের আশুলিয়ায় অবস্থান নেন এবং অনেকের সহায়তায় ছদ্মবেশ হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু করেন।
সে নিজেকে আশুলিয়া প্রেসক্লাবের প্রাক্তন সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিতেন।
পত্রিকা একাত্তর/ মোঃ সোহাগ হাওলাদার