সাগরে জে‌লেদের মাছ ধরা শুরু


জেলা প্রতিনিধি, পিরোজপুর প্রকাশের সময় : ২৯/১০/২০২২, ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ / ৮৪
সাগরে জে‌লেদের মাছ ধরা শুরু

সাগরে মাছ ধরা পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার এমন ৮ হাজার ২শত ৩০ জন নিবন্ধিত জেলে টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে মধ্যরাতে জীবন-জীবিকার তাগিদে আবারো গভীর সমুদ্রে শত শত ট্রলার নিয়ে ছুটবেন মাছ শিকারে। সরকার ঘোষিত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে গত কাল শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) রাত ১২টায়। উপজেলার বিভিন্ন জেলেপল্লী ও মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে সাগরযাত্রার শেষ মুহূর্তে প্রস্তুতি চলিয়েছেন।

সরেজমিনে দেখাযায়, ট্রলার মেরামত, নতুন জাল তৈরি ও পুরানো জাল সেলাইসহ সমুদ্রে মাছ ধরার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে অপেক্ষায় আছে উপকূলের মৎস্যজীবীরা। এতদিন তারা ফিশিং বোট, ট্রলার ও ছোট ছোট ইঞ্জিন নৌকা ডাঙ্গায় তুলে রেখেছিল। কেউ বোট মেরামত, কেউ আবার জালসহ উপকরণ সংগ্রহে প্রায় ২২দিন অলস সময় পার করেছে।

উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে গভীর সমুদ্রে ফিশিং বোট, ট্রলার নিয়ে মাছ শিকারের নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা বেশি সাপলেজা, তুষখালী, বেতমোড়, বড়মাছুয়া, টিকিকাটা, হলতা গুলিশাখালী ও আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নে। এরমধ্যে সাপলেজা ইউনিয়নে নিবন্ধিত জেলের আছে ১ হাজার ২’শত ৯৩ জন, তুষখালী ইউনিয়নে ১ হাজার একশত ৭৯ জন, বেতমোড়ে ৯শত ৮২ জন, বড়মাছুয়ায় ৯ শত ৪২ জন, টিকিকাটা ইউনিয়নে ৬ শত ৫০ জন, হলতা গুলিশাখালীতে ৬শত ১০ জন, আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নে ৫ শত ৬৯ জন, ধানিসাফা ইউনিয়নে আছে ৪শত ৫২ জন। মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে উপকূলীয় এ এলাকা গুলোতে এখন জেলেদের পদচারণায় মুখর।

সাপলেজা ইউনিয়নের খেতাছিড়া গ্রামের জেলে জসিম জানান, দীর্ঘ ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা এবং ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং শেষে আবার সমুদ্রে মাছ ধরতে পারবো বলে আনন্দ লাগতেছে। তবে ঋণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি। আমাদের মত জেলেদের অনেকের ঋণ রয়েছে। ২২দিন ধরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। এখন মাছ ধরে আয়করে তা পরিশোধ করতে হবে। এবার অনেক আশায় নিয়ে আমরা সাগরে নামবো।

বেতমোড়, টিকিকাটা, বড়মাছুয়া, গুলিশাখালী, আমড়াগাছিয়া, তুষখালী , ধানিসাফা এলাকার জেলেরা জানায় আবরোধকালীন সময় যে চাল পাওয়া যায় তা দিয়ে তাদের ৬/৭ সদস্য বিশিষ্ট পরিবার চলে না। অনেক সময় নির্দিষ্ট পরিমানের থেকে কম চাল পাওয়ায় অর্ধাহারে থাকতে হয়। তবুও প্রশাসনের নিয়ম মেনে ২২টি দিন মাছ না ধরে অভাব-অনটনে কাটিয়েছি। ছেঁড়া জাল জোড়ানো, জালে প্লুট লাগানো এবং ট্রলার মেরামতের কাজে সময় পার করেছি।

এখন সাগরে যাওয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি।’ এদিকে মিরুখালী ইউনিয়নে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ২৭৩ জন থাকলেও ফিশিং বোট নিয়ে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া জেলের সংখ্যা কম। একই অবস্থা পৌর শহর ও সদর ইউনিয়নের জেলেদের। পৌর শহরে নিবন্ধিত কার্ডধারী জেলের সংখ্যা ১৪৮ জন, সদরে রয়েছে ৪৭৯ জন জেলে। এ অঞ্চলের জেলেরা সাধারণত স্থানীয় পুকুর, হাওর-বাওর, নদী-নালা, খাল-বিলে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে।

অবরোধকালীন সময়ে এসব এলাকায় অভিযান পরিচালনাও হয়েছে কম বলে জানাযায়। তবে অবরোধ মানা জেলেদের দেখাযায় মাছ শিকারের জাল সহ বিভিন্ন উপকরন ঠিক করতে। রাত পোহালেই নেমে পড়বে মাছ শিকারে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অলিউর রহমান জানান, সারা দেশে ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর মাছ শিকারের টানা ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে আমরা এতোদিন কাজ করেছি।

ইলিশ ধরা বন্ধে উপজেলার বলেশ্বর নদীর ছোট মাছুয়া, হোতাখাল, তুলাতলা, কাটাখাল, মাঝের খাল, বড়মাছুয়া খেয়া ঘাট, মাঝের চর, সাংরাইল বিভিন্ন পয়েন্টে অভিযান চালিয়েছি। আজ মধ্যরাতে ২২ দিনের মাছ শিকারের অবোরধ শেষ হবে। উপকূলীয় প্রান্তিক জেলেদের মাঝে একটা আনন্দ ও উৎসব বিরাজ করছে। উপজেলায় মোট নিবন্ধিত জেলে ৮২৩০ জন। অব‌রোধকাকালীন সময়ে কার্ডধারী জেলেদের খাদ্য সহায়তা দেয়া হ‌য়ে‌ছে ।

পত্রিকা একাত্তর / রুবেল মিয়া নাহিদ