১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে বিজয়ের সপ্তাহখানেক যেতে না যেতেই ২৩শে ডিসেম্বর নীলফামারীর ডোমার উপজেলার সোনারায় উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ক্ষতিগ্রস্ত শহীদ মিনার পুনঃনির্মাণের সময় অব্যবহৃত রকেট লঞ্চার বিস্ফোরণে ৮ জন নিহত হন। তাই দিনটিকে ‘সোনারায় শোক দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।
একাত্তরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে দেশের স্বাধীনতা আনতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাংলার দামাল সন্তানেরা। নীলফামারীর ডোমারেও পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্মম নির্যাতন, লুটপাট সহ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়ে ৬ই ডিসেম্বর পাক হানাদার মুক্ত হয়।
যুদ্ধের সময় উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের সোনারায় উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অবস্থিত শহীদ মিনারটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ডিসেম্বরের ২৩ তারিখ সেটি পুনঃনির্মাণের সময় কয়েকজন কলেজ ও স্কুলপড়ুয়া ছাত্র পার্শ্ববর্তী পুকুরে পড়ে থাকা অব্যবহৃত রকেট লঞ্চারের স্টিল পাইপ দিয়ে শহীদ মিনারের ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড তৈরির জন্য স্ক্রু খোলা মাত্র বিস্ফোরিত হয়ে আটজন নিহত হন এবং আটজন গুরুতর আহত হন।
সেদিনের বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহতরা হলেন—সোনারায়ের ছাত্র সফিকুর রহমান (সফিকার), চিকনমাটির ছাত্র বজলার রহমান, সোনারায়ের কলেজ ছাত্র ছানাউল আলম ছানু, খুরশিদ আনোয়ার দিলিপ, সোনারায়ের মাহবুবুল হক চৌধুরী, স্কুলছাত্র মোস্তাহারুল ইসলাম মস্তু, হরিণচড়ার আব্দুল হামিদ, নীলফামারীর বাবু। এরমধ্যে বাবু সোনারায়ে তার নানাবাড়ি বেড়াতে এসেছিল। বিস্ফোরণে তার মস্তক ছিন্নভিন্ন হয়ে বিদ্যালয়ের দেয়ালে লেগে ছিল।
সেখানে গুরুতর আহত ৮ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তৎকালীন এমএনএ এবং যুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুর রউফ এমপির প্রচেষ্টায় ট্রাকে করে ভারতের শিলিগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
বিস্ফোরণের ঘটনায় সেদিনের গুরুতর আহতরা হলেন—ডোমার থানা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি সোনারায়ের মো. গোলাম আরশাদ, সাবেক উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা গোলাম সারোয়ার, সোনারায়ের আফিজ উদ্দিন সরকার, হাজী আব্দুল হক, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহমুদুল হক চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক মো. ময়নুল ইসলাম এবং জামিরবাড়ী এলাকার ২ জন রাজমিস্ত্রী।
প্রতিবছর ২৩শে ডিসেম্বর সেদিনের অব্যবহৃত রকেট লঞ্চার বিস্ফোরণে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় মিলাদ মাহফিল ও দোয়ার মাধ্যমে সোনারায় শোক দিবসকে স্মরণ করেন প্রিয়জন হারানো মানুষগুলো।
পত্রিকা একাত্তর/ রিশাদ
আপনার মতামত লিখুন :