সময় এসেছে শিক্ষকদের মরোণত্তোর রাষ্ট্রীয় সম্মান করার: সরওয়ার মোরশেদ


জেলা প্রতিনিধি, লালমনিরহাট প্রকাশের সময় : ১৭/০২/২০২৩, ১০:০৮ পূর্বাহ্ণ /
সময় এসেছে শিক্ষকদের মরোণত্তোর রাষ্ট্রীয় সম্মান করার: সরওয়ার মোরশেদ

সকল মানুষের জ্ঞান বিবেক তৈরীর কারিগর হল শিক্ষক অথচ ঐ শিক্ষক মৃত্যুর পর কোন মর্যাদাই পায়না, স্মৃতি চরণ করার সময় এসেছে শিক্ষকদের মরোণত্তোর রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদান করার। শিক্ষা বান্ধব ও ডিজিটাল বাংলাদেশের রুপকার এবং স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অন্যতম -অংশীদারের বাংলাদেশ সরকারের নিকট এই দেশের সকল স্তরের অবিচল শিক্ষাদানে সম্মানিত রানারগণেরা দৈনিক জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীত এর চৌকিদারের ন্যয় পাহাড়াদার শিক্ষকগণ চাকুরি রত অথবা, অবসরপ্রাপ্ত অবস্থায় মৃত্যুর পর বিশেষ রাষ্ট্রিয় মর্যাদায় সমাহিত করার জন্য দেশের সকল ক্ষেত্রের অভিভাবক সহ বিশিষ্ট জ্ঞ্যানী গুনী ব্যক্তিদের মাধ্যমে এই দাবিটি উঠাতে চাইঃ

১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু আপা-মর সকল জনসাধারণের সমর্থনেই বাংলাদেশ নামক একটি দেশের জন্ম দেন। বঙ্গবন্ধুই প্রথম দেশের জনগণকে স্বাধীনতার স্বাদ ও স্বাধীন ভাবে কথা বলার অধিকার অর্জন করে দিয়েছেন। পরবর্তীতে অন্যান্য ও বর্তমান সরকার ক্রমে ক্রমে সকলের দেশটি পরিচালনার চলমান কাজ গুলো চালিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষা, স্বাধীনতা, স্বাথ্য ও অর্থনীতির ভীত কেবল মজবুত থাকলেই এবং দেশের মানুষের কর্মের মানসিকতার পরিবর্তনের ফলেই উন্নত দেশ গড়া সম্ভব। আমি একজন সাধারণ মানুষ। আমি কোন রাজনীতিতে নাই। আমি একজন কারিগরি শাখার বেসরকারি শিক্ষক। তবু ও আপনাদের সহযোগিতায় সবাই মিলে সরকারকে যদি বুঝাতে পারি, এখন সময় এসেছে কারিগরি শিক্ষার মান বৃদ্ধির ব্যবস্থার সহযোগিতা করা ও নতুন- নতুন কর্মের সৃষ্টির ব্যবস্থা করা। এই দেশের বেকার মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ও অধিক কর্মের সন্ধানটি দেশ- বিদেশে নিশ্চিত করা। জন্ম থেকে দেখছি সূর্য উঠে আর ডুবে। মাঝে মধ্যে সূর্য তার তাপ দিতে গরিমশিও করে। দিনের বেলায় কখনো সূর্য হারিয়ে যেতে চায়, কখনো আবার সূর্যকে দেখা যায় না। মাঝে-মধ্যে সূর্য তাপ কমিয়ে দেয়। তবুও বলব সূর্য তার কথা রেখেই চলছে। প্রতিনিয়ত দিনে উদিত হচ্ছে আবার রাতে সূর্য হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের নয়, সৃষ্টিকর্তার নিয়মেই চলছে। সূর্য তার তাপ যেন কোন দিনই হারিয়ে না ফেলে তার জন্য সৃষ্টি কর্তার নিকট আমাদের সবার প্রার্থনা করা দরকার। কারণ হিসাবে সূর্যের তাপ হারিয়ে ফেলা মানেই কিন্তু পৃথিবী চিরতরে অন্ধকারে হারিয়ে যাবে।

তদ্রুপ, একটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে গেলে, চলমান শিক্ষা ব্যবস্থায় আলো না ছড়ালে, শিক্ষকদের মান-মূল্যায়ন ধরে না রাখলে, শিক্ষার্থীর শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলার কারনের সমাধান না করলে, শিক্ষা গ্রহণে ধনী-গরীব বৈষর্ম্য/পার্থক্য বৃদ্ধি থাকলে, মেধার অবমূল্যায়ন করলে, মেধাকে শত্রু ভেবে রোধ করার পরিকল্পনা করলে, মেধা শক্তি কমিয়ে শুন্য করে ফেললে, মেধাকে হারিয়ে পিছনে ফেলে পৃথকিকরণের আশ্রয় নিলে, কালক্রমে এসব থেকেই জনগনের মাঝে কর্ম বিমুখ হতাশার সৃষ্টি হয়ে দেশ একদিন তলানিতে যেতে পারে। তাই আমাদের সবার আগে শিক্ষা আর শিক্ষা এবং কারিগরি জ্ঞান দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষার সমাজ তৈরীতে বেশি বেশি সাহসিকতা দেখানো দরকার। আমিও কারিগরি জ্ঞান দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষার সমাজ তৈরীতে বেশি বেশি কাজ করে যেতে চাই। প্রত্যেকে তার নিজের জায়গা থেকে ন্যায়- নিষ্ঠা প্রতিষ্ঠা করা সহ বিবেক সম্পন্ন হয়ে উঠতে পারেন। প্রত্যেককের ন্যায়-নিষ্ঠা প্রতিষ্ঠার ও বিবেক সম্পন্ন করে তোলার কাজটি করেন শিক্ষকরাই। উহার উপরে আর কোন পেশা নাই। শিক্ষকরাই অবিচল পাঠদানের রানারের মত দায়িত্ব পালন করিতে পিছু হটেন না। প্রত্যেক শিশুর/সন্তান/ছাত্র/ ছাত্রী/ শিক্ষার্থীর মেধার বিকাশটি ঘটিয়ে জাতির সামনে গুছিয়ে একদিন দাড় করিয়ে দেন এই শিক্ষকই। এই দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়ী সম্মানিত শিক্ষকগণেরা কিন্তু জাতির কাছে জাতীয় সংগীত ও জাতীয় পতাকাটির সম্মান দৈনিক রুটিন মোতাবেক ছাত্র-বান্ধবের ন্যায় করেই চলেছেন। মানুষ জন্মের পর পরিবার, সমাজ ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা, কর্ম ও জীবন থেকে দেখে আসছেন সকল স্তরের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নিরলস প্রচেষ্ঠায় শিক্ষা দানের মাধ্যমে সাফল্য অথবা ব্যর্থতা যেটাই দেখি না কেন নিয়ে আসছেন? একটু একটু পাঠদান কার্ষক্রমের ফলেই দেশের মানুষ গুলো ক্রমে ক্রমে সফল ভাবেই তৈরী হচ্ছেন। এবং শিক্ষা গ্রহণের পর দেশ পরিচালনা সহ রাষ্ট্রীয় সকল দপ্তরের কাজ গুলো আবার তারাই করে যাচ্ছেন। এই দেশের শিক্ষকদের শিক্ষা দানের অথবা পাঠদানের ফলেই মানুষ গুলো একদিনের অদক্ষ থেকে দক্ষ মানব সম্পদের শক্তিতে রুপান্তরিত হয়ে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে ধীরে ধীরে এক কাতারে নিয়ে যাচ্ছেন। এখন দেখার বিষয় হলো -আমাদের দেশটা গরিব দেশ থেকে স্বল্প উন্নত দেশের তালিকায় তথা মধ্যম আয়ের দেশে কিভাবে পরিনত হয়েছে? এটা কিভাবে সম্ভব হয়েছে? এটা সরকারের প্রচেষ্ঠায় এবং কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ- আধা দক্ষ শ্রমিক গুলো মানব সম্পদের ন্যয় পরিশ্রমের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ফলেই সম্ভব হয়েছে। বিদেশে ০১ কোটির বেশি শ্রমিকের কঠোর পরিশ্রমের মুদ্রা আয় করে এবং দেশের ভিতরে প্রায় ৫০ লক্ষ এর মত সরকারী চাকুরী, বেসরকারি পর্যায়ে আরো ৫০ লক্ষ মানুষের চাকুরীর আয় মিলে মোট দুই (০২) কোটি মানুষের কর্মের আয় দিয়েই এই দেশের ১৮ কোটি মানুষের জীবন নির্বাহ হচ্ছে। এবং আজ দেশ সক্ষমতায় দাড়িয়ে আছে।

একদিন আগামীর প্রজম্ন দেখবে সত্যি সত্যি বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ থেকে বিশ্বের উন্নত আয়ের দেশের অংশীদার হতে পেরেছে। এটা হলে শুধু সরকারের একার উন্নয়ন নয় বরং দেশের প্রতিটি নাগরিকের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে। এটাকে বাস্তবে রুপ দেওয়া এবং ধরে রাখা সম্ভব হবে যখন এদেশের ১৮ কোটি ষ্টেক হোল্ডারের প্রতিটি পরিবারের পক্ষ থেকে কমপক্ষে ০১ থেকে ০২টা করে নিজ নিজ সন্তানকে অথবা অপরের সন্তানকেও কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করে সত্যিকারের দক্ষ মানব সম্পদে পরিনত করে ধীরে-ধীরে এই সমাজের জ্ঞানী মানুষ গুলো যখন একদিন প্রবল আগ্রহী হয়ে উঠবেন। এই সমাজে অনেক ভালো মানুষ আছেন। কিন্তু ভালো মানুষ গুলো ভুমিকা রাখতে চান না? সমাজের ভালো মানুষকে বার বার বুঝাতে পারলে এবং সমাজের ভালো মানুষের ভালো কাজের দৃষ্টান্তের মাধ্যমেই সম্ভব মত আপনার এলাকার শিক্ষার্থী গুলোকে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণের ফলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পথ দেখাতে পারে। অবশ্য সরকারও বসে নেই। আপনাকে-আমাকে এগিয়ে আসতে হবে এবং কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণে ও কারিগরি শিক্ষা প্রসারে কাজ করতে হবে। এদেশের জনগণকে যখন বুঝানো যাবে, কারিগরি শিক্ষাই দিতে পারে প্রত্যেককে এক- একটি কর্ম। জনগণ যখন বুঝবেন কারিগরি শিক্ষা জীবনের মান হানি করে না, কর্ম বিমুখও করে না, বরং কারিগরি শিক্ষা সকল কর্মের অংশীদারিত্বের বেশি-বেশি সুযোগ দেশে-বিদেশে এনে দিতে পারে । এবং ব্যক্তির সমান মর্যাদাও প্রতিষ্ঠিত করে। মানুষ যখন একদিন সাধারন শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষাকে একটু স্পেস দিবে এবং দ্রুত কর্ম হওয়ার সুবিধাটা বুঝবে। এদেশের মানুষ যখন কারিগরি শিক্ষাকে ব্যঙ্গ না করে সত্যিকারের অর্থে কর্ম উপোযোগী শিক্ষার ধারক-বাহক হিসাবে গ্রহণ করবে। তখন এই দেশটার প্রত্যেকটা পরিবারের মাঝে একটা বিরাট শক্তি সঞ্চয় হবে ও অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে। তখনই কিন্তু বাংলাদেশের প্রতিটা পরিবার সামাজিক ভাবে মজবুত হবে এবং টেকসই দেশের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। আগামীদের জন্যই কিন্তু সকল অভিভাবক- নাগরিকের এখনই যৌথ প্রচেষ্ঠার প্রয়োজন, সাথে সাথে সফল ভাবে অন্যজনকে ও বুঝানো প্রয়োজন। প্রত্যেককে কমপক্ষে দেশের স্বার্থে যার-যার যায়গায়-অবস্থান থেকে অন্তত ০১ জন করে শিক্ষার্থীকে হলেও কারিগরি শিক্ষায় ট্রেনিং করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নেওয়া প্রয়োজন। নতুন কর্ম সৃষ্টিতে ০১ জন শিক্ষার্থী ৬ষ্ট শ্রেণি থেকে মাষ্টার্স ক্লাস পাশের পরে ও কারিগরি শিক্ষাটি পরিপুরক ভাবে পুনুরায় শিক্ষা গ্রহন করে বিশেষ ভুমিকা রাখতে পারেন তা বুঝাতে হবে। যে কোন বয়সে যে কোন ক্লাস পাশের পর সংক্ষিপ্ত কারিগরি শিক্ষার কোর্স সম্পন্ন করেও এক-এক জনকে এগিয়ে নেওয়ার কাজটি আপনি জীবনে একবার দায়িত্ব নিতে পারেন । এখন ৬ষ্ঠ শ্রেনি থেকে আন্ডার গ্রাজুয়েট এর সব ক্লাসেই মেধার ক্রম অনুযায়ী কারিগরি শিক্ষায় দফায় দফায় প্রবেশের সমান সুযোগ সরকার করে দিয়েছেন। কারিগরি শিক্ষাটি একটি বিজ্ঞান শাখার পূনাঙ্গ শিক্ষা । আপনার সন্তানের ভাল কর্ম পেতে চান, তাহলে বিজ্ঞান অথবা কারিগরি শাখায় আপনার সন্তানকে পড়ান। এর বাইরে সাধারণ শিক্ষায় কম মেধায় এখন আর কোন কর্ম নাও পেতে পারেন। যে কোন অবস্থায় যে কোন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষায় উচ্চতর ডিগ্রী নেওয়ার পর পুনুরায় সাধারণ শিক্ষার সকল স্তরের মধ্যে প্রবেশে সমান ডিগ্রীর মান পাওয়া যায়, সমান মর্যাদা পাওয়া যায়, সমান ভাবে সকল নিয়োগ পরীক্ষার প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া যায়। কারিগরি শিক্ষা এখন আর সমমানের শিক্ষা নয়। বরং কারিগরি শিক্ষাটি এখন এক নন্বরের এক নন্বর শিক্ষা। যদি জনগণের মাঝে এই স্তরের শিক্ষা থেকে দক্ষতা গ্রহণ করাতে পারেন তবেই বুঝবেন কত টাকা আয় করা সম্ভব হবে ?

আপনি একাই ভালো লেখাপড়া করে ভাল একটি বিসিএস কর্ম পাবেন? একাই ভালো থাকবেন? আপনার সন্তানটি শুধু মানুষের মতো মানুষ হবে? আপনার সন্তানের পাশাপাশি অন্যের সন্তানের জন্য একটু ভাবুন ? ঠিক আছে। এই ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসার দরকার নাই ? থাকুন। অন্যের সন্তানের মঙ্গল কামনা করা কি অপরাধ হবে ? ধর্মীয় ভাবে কি একে অপরের প্রতি কোন দায়- দায়িত্ব নিতে বলে নাই ? একটি অসহায় প্রতিবেশীর মেধাবী সন্তানের কান্না থামানো, একটি নিকটতম গরীব মধ্যম মেধাবী সন্তানের বেকারত্ব ঘুচানো, যে কোন ধর্ম্যরে অসহায়, অনাথ কম মেধাবীর সন্তানটির , ও কম মেধা বিকাশ সম্পন্ন শিশুটির দিকে একটু তাকিয়ে থাকেন তো ? দেখবেন, ঐ অসহায় সন্তানটি যদি আপনাদের পরিবারের একজন হতো? অথবা, আপনার মৃত্যুর পর কোন কারনে যদি এই পরিবারে এমন হয় ? তাই, এত আত্বকেন্দ্রিকতা নয় ? আসুন সকলে মিলে এবং সকল নাগরিকের প্রচেষ্ঠায় একটা বড় নিয়ামকের শক্তিতে আমরা রুপান্তরিত হই। আপনি আপনার পরিবারের কম মেধা সম্পন্ন সন্তানটি কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করার সিদ্ধান্ত নিলেও নিতে পারেন এমনটি নয়। এখন থেকে ভালো মেধার সন্তানটি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের কারিগরি শাথায় ভর্তি করাতে পারেন। এই দেশের সকল ক্ষেত্রের শিক্ষার্থীর ভাগ্য নির্মাতা, শিক্ষা চর্চা ও কর্ম নির্মাতার নির্ধারক কিন্তু বর্তমান সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক, অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রভাষক, হুজুর, সুপার, প্রশিক্ষক-শিক্ষকগণেরাই। মানুষের জন্ম থেকে কবর পর্যন্ত যেমন প্রতিনিয়ত নতুন- নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়, তেমনি নতুন-নতুন শিক্ষা ও লাভ করে, আবার ভুল ও করে, ইচ্ছাকৃত অপরাধ ও করে, অপরাধ সংশোধন করার চেষ্টা ও করে। শিক্ষা গ্রহণেই কেবল সবকিছুর বহমান আমরা দেখতে পাই।

তাই, এই দেশে যৌথ ভাবে প্রাথমিক শিক্ষায়, কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষায়, এবতেদায়ী মাদ্রাসায়, কওমী মাদ্রাসায়, মাধ্যমিক সরকারি-বেসরকারি স্কুলে, সরকারি- বেসরকারি কলেজে, আলিমে, ফাজিলে, কামিলে, রাষ্টায়ত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে, ডাক্তারী পেশায়, আইন পেশায়, মাধ্যমিক কারিগরি ভোকেশনাল স্কুলে, সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে, সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ইন্সিটিটিউট সহ ইত্যাদি বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক-একজন শিক্ষক সকল শিক্ষার সৈনিক হিসাবে সুদির্ঘ্য ৩৫-৪০ বছর একাধারে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মানচিত্রের পবিত্র লাল-সবুজের জাতীয় পতাকাকে জীবনের মধ্যে ধারণ ও লালন করে বহু বছর পর্যন্ত অবিচল পাঠদান করেই চলেছেন। একজন শিক্ষক কিন্তু জাতীয় পতাকে ও জাতীয় সংগীতকে সরবে-নিরবে দিনের পর দিন সেলুট ও সম্মান দিয়েই পাঠদানের ক্লাসগুলি করে চলেছেন।হয়ত স্বাধীন দেশের মর্যাদার এই কাজটি করতে অন্যরা সময় দিতে পারেন না? এই শিক্ষকগণেরা জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে দারিদ্রকে আলিঙ্গন করে অবসর নিচ্ছেন। কেউ কেউ খালি হাতে, কেউ কেউ বিনা এমপিও তে চাকুরীটাও শেষ করছেন। শিক্ষকের নিজের সন্তানটি হয়তো মানুষের মত মানুষ তৈরী করার সামর্থ্য পাচ্ছেন না? কোন অভিযোগ ছাড়াই হাসি মুখে দিনের পর দিন অন্যের সন্তানটির অবিরাম শিক্ষার দক্ষতা বৃদ্ধিতে শিক্ষকটি নিবিড় ভাবে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এদেশে অনেক শিক্ষক ধনী আছেন, অন্যজন শিক্ষক আবার অসহায় মানবেতর জীবন যাপনও করেছেন। এটাই কি বাস্তবিক বৈষর্ম্য? কারন, একটি লোক যখন লেখাপড়া শেষ করে দেখেন মেধার বিচারে তিনি শুন্য। বাজারে কোন চাকুরি নাই। যখন কোন কর্মই জুটে না তখন বাংলাদেশের সস্তা পেশাটির মধ্যে প্রথমে টিউশনি বেচে নেন। যখন দেখেন এই পেশায় জীবন নির্বাহ প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। হতাশা ছাড়া কিছুেই করার থাকেনা। যে কেউ সহজেই জীবন রক্ষার তাগিদে এবং নিজেকে কর্মহীন বেকার ভেবে, বেকারত্বের হারকে মানাতেই অনেকে শিক্ষকতার এই সহজ পেশাটিতে প্রবেশ করছেন। এখন আর শিক্ষকতার পেশাটি একবারে সহজ নয়? সরকারও নজর দিয়েছেন। যাইহোক, একজন শিক্ষক আজীবন অভাবের মধ্যেই নিজের মেধা শক্তিকে বিলিয়ে দিচ্ছেন। আর বলছেন, আমার ছাত্র ডাক্তার? আমার ছাত্র ইঞ্জিনিয়ার? আমার ছাত্র জর্জ? আমার ছাত্র বিসিএস অফিসার? আমার ছাত্র সচিব? খালি মুখে ও বুকে বল নিয়ে শিক্ষকগণ বলেন আমার ছাত্র অমুক হয়েছে। নিজেকে গর্ভ বোধ করে ধরে রাখতে পারেন না? এভাবেই রিক্ত প্রাপ্তির একজন শিক্ষক মৃত্যু বরণ করছেন ? হয়তবা আমরা কেউ একজন শিক্ষকের জীবন সংসার এর খোজ- খবর রাখতে পারি না। এটাই স্বাভাবিক। এটাই নিয়তির পরিনতি। বঙ্গবন্ধুর এই বাংলাদেশে সকল স্তরের শিক্ষকগণকে শুধু কিছু আর্থিক অনুদান করে নয়, বরং এই শিক্ষকগণেরা যার-যার যায়গায় মৃত্যু বরণ করবেন এবং মৃত্যুর পর শুধু সমাজ নয় ,রাষ্ট্র খেকেও এখন সম্মান দেওয়া উচিত। শিক্ষকতার পেশাটি সম্মানের ও মর্যাদা রক্ষার পেশা। শুধু মুখে নয় এবার রাষ্ট্রকে প্রত্যেক শিক্ষকের মৃত্যুর পর বিশেষ ভাবে রাষ্টীয় মর্যাদায় সমাহিত/দাফনের ব্যবস্থা করার জন্য অভিবাবকেরাও দাবি করেন বর্তমান মহানুভবতার সরকারের নিকট। শিক্ষকগণের বেশি কিছু চাওয়ার থাকে না। কোন কোন শিক্ষক জীবনে একবার রাজধানীতে ঘুমাতেও চায় নাই। বর্তমান দীনদার মহান সরকার, মহান পেশার শিক্ষকের মর্যাদাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারেন। এতে করে সরকারের টাকা ব্যয় হবে না? সরকারের সাহসীকতাও মানসিকতার নিরিখে শিক্ষকের মরণোত্তোর রাষ্ট্রীয় মর্যাদার স্বীকৃতি দিলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাংলাদেশ মর্যাদার চরম শিখরে উঠবে। মর্মে, সরকার একটি প্রজ্ঞাপন/ এ্যাক্ট/ আইন / মন্ত্রী পরিষদে অনুমোদনের ব্যবস্থা করলে অথবা, নীতিমালা জারি করে মানবতার বাংলাদেশে শিক্ষকদের মরোনত্তোর রাষ্টীয় সম্মান ঘোষনায় শিক্ষকতার পেশা সফলতা পাবে। এর জন্য সবাই সমর্থন দিন। সবাই সরকারের নিকট দাবি তুলুন। আমরা সবাই কারো না কারো শিক্ষকের ছাত্র। শুনেছি, শিক্ষকের পেশা শুধু চাকুরী নয়, এই পেশা অলাভজনক পেশার ন্যয় এবং নোবেল জয়ী আদর্শ পেশার মতো মহান। শিক্ষকগণ শুধু ছালাম-আদাব পাওয়ার গন্ডিতে আদর্শ পেশাটির কর্মটি ক্ষত- বিক্ষত হয়ে নীরবে জীবন শেষ করবেন? আমরা কেউ ভাবছি না? বর্তমানে এই পেশাটিকে এক নতুন মোড়কে, নতুন দিগন্তে সবাই মিলে শিক্ষকের মরোণত্তোর রাষ্টীয় মর্যাদা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করাতে পারেন। তাহলে অধিক শিক্ষিত ব্যক্তিগণেরাও এই মহান পেশা গ্রহণে আগ্রহী হয়ে উঠবেন। যে সরকার এই কাজটি করবেন, সেই সরকার আজীবন অমর রাষ্টীয় সম্মাানের অধিকারী হয়ে থাকবেন। ১৮ কোটি মানুষের সম্মাান কুড়াতে থাকবেন। দেশে শিক্ষার আলো সম্মানের সহিত জ্বলতেই থাকবে। অপর দিকে, বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের শিক্ষা নামক- মরোনত্তোর সকল শিক্ষককে সম্মানিত করলে শিক্ষার মূল ধাপ থেকে অনেক উচুতে উঠে যাবে। যা বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ রোল মডেল হয়ে থাকবে। উপরের পর্যায়ের নির্বাহীরা হয়তো বলবেন না- না এটা সম্ভব না? কারন হিসাবে দেখাবেন সবার মতো ওনারা ও চাকুরী করেছেন মাত্র। তাছাড়া মুক্তিযোদ্ধার শিক্ষকরা তো রাষ্টীয় মর্যাদায়- সম্মানীত হন। তাহলে আলাদা করে অন্যান্য শিক্ষকদের দাফনকালে আবার মরোণত্তোর রাষ্ঠ্রীয় সম্মান দিতে হবে কেন? আমি বলব দিতে হবে? যেনারা দ্বিমত পোষন করবেন দয়া করে ভেবে দেখুন? তেনারাও কিন্তু একদিন প্রথম শ্রেণি হইতে ডক্টর ডিগ্রী অর্জন করেছেন অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অনেক শিক্ষকদের পান্ডিত্বের পরশের কারনেই। হয়তো আপনারা পিতা, মাতা, পরিবার,ও সরকারের বৃত্তির টাকায় পড়াশুনা করেছেন? এখানে শিক্ষকের আবার দায় কি?

কিন্তু যে শিক্ষকটি সারাটি জীবন বাংলাদেশের স্বাধীনতার মানচিত্রের পবিত্র লাল-সবুজের জাতীয় পতাকাকে ও জাতীয় সংগীতকে দৈনিক সেলুট- সম্মান দিয়েই গেছেন। আলাদা করে কিছুই চাননি,পাননি। একজন শিক্ষক জাতীয় পতাকাকে দৈনিক শ্রদ্ধা ভরে স্বরণ করে শ্রেনি কক্ষে আজীবন পাঠদান দিয়েই গেছেন। প্রত্যেক শিক্ষকের চোখে-মুখে, কপালে অর্জনের জাতীয় পতাকার রং লেগে আছে। এই শিক্ষকেরাই বিশেষ ভাবে জাতীয় পতাকার ধারক ও বাহকের একজন কর্মচারী। হউক তিনি প্রাইমারীর শিক্ষক, হউক তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, হউক তিনি যে কোন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ? বই আর জাতীয় সংগীত ও জাতীয় পতাকাকে একাকার করে ভালো বেসেই তার একদিন মৃত্যু হলো। তাহলে, জাতীয় পেশার শিক্ষকদের কেন স্বাধীন বাংলার লাল -সবুজের জাতীয় পতাকা দিয়ে একটু ডেকে রাষ্টীয় মর্যাদায় সমাহিত/দাফনের ব্যবস্থা করা যাবে না ? শিক্ষকের মৃত্যুর পর রাষ্টীয় মর্যাদায় সমাহিত হলে কি বঙ্গবন্ধুর ডাকে সবার স্বাধীনতার দেশটা কি ম্লান হয়ে যাবে ? বঙ্গবন্ধুর ডাকে অর্জনকৃত স্বাধীনতার দেশটার কি সম্মান শেষ হয়ে যাবে ? রাষ্ট্রের কি অনেক অর্থের অপচয় হবে? নাকি সম্মানের অপচয় হরে? নাকি প্রট্রোকলে নেই? শিক্ষকের এই মর্যাদা অর্জনে প্রয়োজনে প্রট্রোকলে পরিবর্তন আনুন? এটা বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি প্রত্যাশা আপনারা মরোনত্তোর শিক্ষকদের রাষ্টীয় মর্যাদায় সমাহিত করতে তথা সম্মান দিতে কুন্ঠাবোধ করবেন না। বরং মানবতা বিরোধী, রাষ্ট্র বিরোধী কর্ম-কান্ডে জড়িতদের বেতিরেকে এক-একটি শিক্ষা দানের সৈনিকের মরোনত্তোর কালে দেশের সকল সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকদের, ও শিক্ষা সংক্রান্ত সকল দপ্তরের জ্ঞানী ব্যক্তি গণের এই মরোনত্তোর রাষ্টীয় মর্যাদার সম্মান পাওয়ার ব্যবস্থার জোর দাবি রাখছি। এই সম্মান দেখাতে আপনারা সবাই উদ্দ্যোগি হন এবং সম্মত হন । আমি আপনাদের মাধ্যমে মহান সরকারের প্রতি এই অধমের আকুতি ও দাবিটি তুলে ধরে কৃতজ্ঞতা ভরে মহান মাননীয় শেখ হাসিনা পরিবারের জন্য অসংখ্য শিক্ষকের পক্ষ থেকে বর্ণ ও ভাষা অর্জনের মাস- ফেব্রুয়ারী মাস, বায়ান্নর বাংলা ভাষা আন্দোলনের অর্জনের সেই বাংলা বর্ণ রক্ষার মতো আপনার রক্ষার সম্মান জানাই ।এবং সম্মানিত শিক্ষকদের উদ্দ্যেশ্যে জানাইলাম যে, আমার স্বাভাবিক মৃত্যুর পর আমার ০২টি চক্ষু মহান মানবীয় যে কোন ধর্ম্যের শিক্ষকতার পেশায় স্যারদের প্রয়োজনে দান করিতে সম্মত হইলাম। আমি আরো কৃতজ্ঞ থাকিব যদি কোন প্রথম সারির পত্রিকা অথবা প্রথম সারির লেখক, প্রথম সারির মহান সাংবাদিকগণ কেউ আমার ভুল-মন্দ লেখাটি কাট-ছাট বা ঠিক- ঠাক করে উপরের মহলের দৃষ্টি আকর্ষন করান ও প্রচারের ব্যবস্থায় সহায়তা দান করেন তবে কৃতজ্ঞ থাকিব। সকলের প্রতি সৃষ্টিকর্তা সহায় হবেন বলে আমি প্রত্যাশা করি।

সর্বপরি এই অসম দুনিয়ার প্রতিযোগিতায় সমতা ফিরে পাবার লড়াইয়ের জন্যই কেবল দরকার শিক্ষা আর বুদ্ধি। আর এই শিক্ষার দক্ষা বৃদ্ধির কাজটি শিক্ষকের। দেখা যায়, শিক্ষকের প্রতি ছাত্রের সম্মান কালের বিবর্তনে একদিন হারিয়ে যায়, কিন্তু রাষ্ট্রের মরণোত্তোর রাষ্ট্রীয় সম্মান ঘোষনা দিলে আর কোন দিন যেন শেষ হবার নয়। এই সমাজের সমাজ নির্ধারকগণ, এই সমাজের সমাজপতিদের, এই সমাজের সমাজ মাতাদেরকে বলব আপনারা এলাকার, রাষ্ট্রের, শিক্ষাব্যবস্থায় সংযুক্ত কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তনের কাজটি আপনারাই করতে পারেন। দেশের সমাজ নির্ধারকদের প্রতি আমার আবেদন, সুশীল নাগরিক, অভিভাবকগণের প্রতি, কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী করে তোলার জন্য আপনিও একজন শিক্ষকের ন্যয় কাজ করার সহযোগিতা চাইতে পারেন।

পরিশেষে, এই প্রতিপাদ্য দিয়ে শেষ করব শিক্ষা গ্রহণ যার -যার অধিকার এবং মেধা বিকশিত করার দায়িত্ব শিক্ষক সহ সবার। আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশে বর্তমান ডিজিটাল পদ্ধতিতে কারিগরি শিক্ষা প্রসারে এই প্রচার একটি উত্তম উপায় মাত্র।

লেখকঃ- সরওয়ার মোরশেদ মোড়ল

পত্রিকা একাত্তর/ গোলাপ মিয়া