বাবা আ.লীগ নেতা, ছেলে ছাত্রদল সভাপতি

নিজস্ব প্রতিনিধি

নিজস্ব প্রতিনিধি

১৮ এপ্রিল, ২০২২, ২ years আগে

বাবা আ.লীগ নেতা, ছেলে ছাত্রদল সভাপতি

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হয়েছেন কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ। তিনি যশোরের কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী রফিকুল ইসলামের ছেলে।

রোববার (১৭ এপ্রিল) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটি ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানাভাবে আলোচিত হচ্ছে শ্রাবণের সভাপতি হওয়ার বিষয়টি।

২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী ছিলেন কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ। সেই সময় আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী হওয়া নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। ওই সম্মেলনে ভোটে হেরে তিনি সিনিয়র সহসভাপতি মনোনীত হন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, রফিকুল ইসলামের বড় ছেলে কাজী মুস্তাফিজুর রহমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। মেজো ছেলে কাজী মুজাহিদুল ইসলাম পান্না উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক। সেজো ছেলে কাজী আজাহারুল ইসলাম মানিক উপজেলা ছাত্রলীগের বর্তমান আহ্বায়ক।

আর রফিকুল ইসলামের ছোট ছেলে রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ। কেশবপুরে কাজী পরিবারের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও কাজী রওনাকুল ইসলাম ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। আজ শ্রাবণ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা চলছে।

এ বিষয়ে কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাস্টার রুহুল আমিন বলেন, রাজনীতি করার অধিকার সবার আছে। পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও শ্রাবণ ছাত্রকাল থেকেই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এতে দোষের কিছু নেই। শ্রাবণ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে, এটাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের দলে কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আছে বলে মনে হয় না

উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আজিজুর রহমান পত্রিকা একাত্তর কে বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত খুশি হয়েছি। মহাকবি মাইকেল মধুসূদনের জন্মস্থান কেশবপুরের আরেক কৃতী সন্তান শ্রাবণ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হয়েছেন। এটা অবশ্যই আমাদের জন্যে গর্বের।’

আওয়ামী লীগ নেতার ছেলেকে ছাত্রদলের সভাপতি করায় নেতাকর্মীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তবে শ্রাবণের পরিবার বলছে, দীর্ঘ ১২-১৩ বছর ধরে তার সঙ্গে পরিবারের কারও কোনও যোগাযোগ নেই।

২০১৯ সালে শ্রাবণ যখন প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি প্রার্থী হন, সেই সময় তার বাবা রফিকুল ইসলাম ও ভাইয়েরা যশোর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে রফিকুল ইসলাম দাবি করেন, ‘ভিন্ন রাজনৈতিক দর্শনের কারণে শ্রাবণের সঙ্গে তাদের পারিবারিক কোনও সম্পর্ক নেই। সেও (শ্রাবণ) বাড়িতে আসে না এবং পরিবারের কেউ তার সঙ্গে যোগাযোগ করে না।’

এদিকে শ্রাবণ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় সন্ধ্যায় কেশবপুর শহরে আনন্দ মিছিল বের করে উপজেলা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। তারা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করেন এবং মিছিল শেষে মিষ্টিমুখের আয়োজন করা হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘শ্রাবণ ভাইয়ের পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনিই একমাত্র আমাদের দলের সঙ্গে রয়েছেন। সে কারণে বাবা ও ভাইয়েরা তার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করেন। তিনিও বাড়ি যেতেন না। ২০১৮ সালে ভোটের সময় ধানের শীষের জন্যে কাজ করতে একবার এসেছিলেন।’

উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মশিয়ার রহমান বলেন, ‘কেশবপুরের সন্তান কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি হয়েছেন। এলাকার মানুষ হিসেবেও গর্ব হচ্ছে। তাছাড়া শ্রাবণ দীর্ঘদিন ছাত্রদলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমরা খুব খুশি। সে ছাত্রদল না হয়ে অন্য কোনও সংগঠনের হলেও খুশি হতাম। কারণ, শ্রাবণ আমাদের এলাকার সন্তান।’

আওয়ামী পরিবারের সন্তান ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি হয়েছেন—এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন, ‘শ্রাবণ কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি হয়েছে শুনেছি। নিজ মত প্রচার করা একজনের ব্যক্তিস্বাধীনতার বিষয়। এটা নিয়ে আমার কোনও মাথাব্যথা নেই।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফা, ‘তার নেতৃত্ব নিয়ে আমার কোনও মতামত নেই। আমি খুশিও না, দুঃখিতও না। কেননা, সে তো আমার দলীয় আদর্শের কেউ না। যদি আমার দলের কেউ হতো, তাহলে প্রতিক্রিয়া থাকতো।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শ্রাবণের বাবা কাজী রফিকুল ইসলাম আমাদের দলের সহ-সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান। তার এক ভাই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে ইউপি নির্বাচন করেন এবং দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার হন। একই কারণে তার আরেক ভাই উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক—তিনিও বহিষ্কার হন।’

এ বিষয়ে শ্রাবণের ভাই কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী মুস্তাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘আজ বিকালে শ্রাবণের নেতৃত্বের বিষয়ে শুনেছি। তার ব্যাপারে আমাদের পরিবারের কোনও প্রতিক্রিয়া নেই। কারণ, আমরা সবাই আওয়ামী পরিবারের সদস্য, একমাত্র সে ছাড়া। ভিন্ন রাজনীতি করার কারণে আমাদের সঙ্গে তার ১২-১৩ বছর কথা হয় না। সে বাড়িতেও আসে না।

পত্রিকা একাত্তর /নিউজ ডেস্ক

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news