যাত্রী সংকটে বন্ধ হলো নব্বই বছর পুরনো কমলা রকেট


নিজস্ব প্রতিনিধি প্রকাশের সময় : ২৪/০৯/২০২২, ৯:৫০ পূর্বাহ্ণ / ২৭৪
যাত্রী সংকটে বন্ধ হলো নব্বই বছর পুরনো কমলা রকেট

মোরেলগঞ্জে ক্রমাগত যাত্রী  সংকটে বন্ধ করা হয়েছে প্রায় নব্বই বছর আগের পুরনো ঐতিহ্য ঢাকা টু মোরেলগঞ্জগামী কমলা রকেট সার্ভিস। রকেট পরিচালনা বন্ধ প্রসঙ্গে গতো ২২/০৯/২২ তারিখে বাংলাদেশ অভ্যন্তরিন নৌপরিবহন কর্পোরেশনের অভ্যন্তরিন জাহাজ চলাচল প্রতিষ্ঠানের যাত্রী চলাচল ইউনিটের পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য প্রকাশ করে বিআইডাব্লিউটিসি।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরিন নৌপরিবহন কর্পোরেশনের অভ্যন্তরিন জাহাজ চলাচল বিভাগের উপ মহাব্যবস্থাপক মোঃ নাসির চৌধুরী (বানিজ্য) এর সাক্ষরিত এক স্মারক লিপিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়,ঢাকা থেকে মোরেলগঞ্জ ঢাকা রকেট সার্ভিসে ক্রমাগত যাত্রীদের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কারনে কতৃপক্ষ ঢাকা টু মোরেলগঞ্জের যাত্রী চলাচল রকেট সার্ভিস আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে।

এদিকে হঠাৎ করে রকেট চলাচল বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নদীপথে চলাচলকারী মোরেলগঞ্জ উপজেলা সহ বরিশাল, চাঁদপুর ও অন্যান্য এলাকার সাধারন ব্যাবসায়ীরা, তারা বলছেন, হঠাৎ করে রকেট বন্ধ হওয়ায় আমাদের মালামাল পরিবাহনে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

এতোদিন আমরা ঢাকার সাথে ব্যাবসায়িক লেনদেনের সরাসরি মালামাল আনা নেয়ার পরিবাহন হিসেবে এই রকেটকেই ব্যাবহার করতাম অল্প খরচে খুব সহজেই আমরা মালামাল ডেলিভারী পেতাম। রকেট বন্ধ হওয়ার কারনে সড়কপথে আমাদের মালের ভাড়া অতিরিক্ত পড়ছে বলেও জানান তারা।

কমলা রকেট

এছাড়াও জন ভোগান্তিতে পড়েছেন রকেটে চলাচলকারী বরিশাল চাঁদপুরগামী সাধারন যাত্রীরা। বাংলাদেশের ইতিহাসে জলপথে অতীতে বৃটিশ কতৃক নির্মিত বেশকিছু প্যাডেল স্টিমার ঢাকা-কলকাতা নৌরুটে চলাচল করলেও।

পরবর্তীতে ঢাকা-কলকাতা রুট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্টিমারগুলো ঢাকা হতে খুলনা পর্যন্ত যাতায়াত করতো। বর্তমানে নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় ঢাকার বুড়িগঙ্গা থেকে দেশের প্রধান প্রধান নদী পেরিয়ে এসব প্যাডেল স্টিমার বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ পর্যন্ত চলাচল করছিলো।

প্রায় শতবর্ষ পুরনো এই স্টিমারগুলোতে জ্বালানী হিসেবে কয়লা ব্যবহৃত হতো তারপর আশির দশকের শুরুতে কয়লার পরিবর্তে ডিজেল ইঞ্জিনে রূপান্তরিত করা হয়। দুইটি বড় বড় প্যাডেলের সাহায্যে লঞ্চটিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বলে এর নাম প্যাডেল স্টিমার করা হয়। তবে তৎকালীন সময়ে দ্রুতগতির কারণে স্টিমারগুলো রকেট স্টিমার নামে অধিক পরিচিতি লাভ করে।

বর্তমানে সমগ্র পৃথিবীতে অবশিষ্ট অল্পকিছু প্যাডেল স্টিমারের মধ্যে ৫টি রয়েছে বাংলাদেশে। পিএস অস্ট্রিচ (১৯২৯), পিএস মাসুদ (১৯২৮), পিএস লেপচা (১৯৩৮), পিএস টার্ন (১৯৫০) এবং এমভি শেলা (১৯৫১) নামের স্টিমারগুলো ঢাকা-খুলনা নৌরুটে বাংলাদেশ আভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি)-র অধীনে চলাচল করে।

এমধ্যে সবচেয়ে বড় হলো ‘মাসুদ’ এবং ‘অস্ট্রিচ’৷ আজ থেকে প্রায় নব্বই বছর আগে ১৯২৮ সালে কলকাতার গার্ডেন রিচ ওয়ার্কশপে প্যাডেল স্টিমার পিএস মাসুদ তৈরি করা হয়।প্যাডেল স্টিমারগুলো ঢাকা নদী বন্দর সদরঘাটের ১৬ নং পল্টুন লালকুঠির ঘাট থেকে সপ্তাহে ৪ দিন সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিটে ছেড়ে আসতো। এবং বাকি দুইদিন এমভি বাঙালি ও এমভি মধুমতি জাহাজ চলাচল করে আসছিলো।

স্টিমার জাহাজের নাম ঢাকা থেকে ৬টা ৩০ মিনিট বরিশাল, মোরেলগঞ্জ থেকে ৯টা ৩০ মিনিটে ছাড়া হতো।নদীমাতৃক বাংলাদেশের, জলপথে ভ্রমণের আছে এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস।আর এই ইতিহাসের পরিসমাপ্তির ইতিটা যাত্রী সংকটে ঘটবে কেই বা কল্পনা করেছে।

পত্রিকাএকাত্তর / নাজমুল