গজনী অবকাশে পর্যটকদের উপচে পড়া ভীড়


জেলা প্রতিনিধি, শেরপুর প্রকাশের সময় : ১০/০২/২০২৩, ৪:২৭ অপরাহ্ণ /
গজনী অবকাশে পর্যটকদের উপচে পড়া ভীড়

ঘুরে আসুন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি শেরপুরের ঝিনাইগাতীর গারো পাহাড় “গজনী অবকাশ বিনোদন কেন্দ্র”। এ গারো পাহাড়ের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগে দর্শনার্থীদের ক্ষেত্র তৈরি করেছে গজনী অবকাশ পর্যটন কেন্দ্র। এবার গজনী অবকাশে বেশ কয়েকটি নতুন রাইড যুক্ত হওয়ার পর পর্যটকদের কাছে তা আরও আকর্ষণীয় ও লোভনীয় হয়ে উঠেছে। এখানে যুক্ত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ঝুলন্ত ব্রীজ, ক্যাবল কার ও জিপ লাইনিং, ওয়াটার পার্ক, কালচারাল সেন্টার,বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর, প্যাডেল বুট, ফুড কর্নার। ফলে জেলার পর্যটনখাতে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা।

জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ১৯৯৩ সালে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তঘেঁষা ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নে ৯০ একর জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা হয় গজনী অবকাশ কেন্দ্রটি। ধাপে ধাপে পর্যটন কেন্দ্রটিতে নির্মাণ করা হয় দৃষ্টিনন্দন মৎস্য কন্যা (জলপরী), ডাইনাসোরের প্রতিকৃতি, ড্রাগন, দন্ডায়মান জিরাফ, পদ্ম সিঁড়ি, লেক ভিউ পেন্টাগন, পাতালপুরী, হাতির প্রতিকৃতি, স্মৃতিসৌধ, গারো মা ভিলেজ, ওয়াচ টাওয়ার ইত্যাদি। সারি সারি বাহারি গাছের পাহাড়ের মাঝ দিয়ে আঁকাবাঁকা সড়ক, ছোট-বড় মাঝারি টিলা আর চোখ জুড়ানো সবুজের বিন্যাস প্রকৃতিপ্রেমীদের নিশ্চিত দোলা দিয়ে যায়। পাহাড়, বন ও দৃষ্টিনন্দন লেকের কারণে কেন্দ্রটি ভ্রমণপিপাসু ও প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে ক্রমেই সুপরিচিত হয়ে উঠেছে। পাহাড়ের বুক জুড়ে তৈরি হয়েছে সুদীর্ঘ ওয়াকওয়ে। পায়ে হেঁটে পাহাড়ের স্পর্শ নিয়ে লেকের পাড় ধরে হেঁটে যাওয়া যায় এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে।

ফলে প্রায় দুই যুগ ধরে শীতে অথবা সরকারি বন্ধের দিনে দেশ-বিদেশের লাখো পর্যটকের পদভারে মুখরিত হয় পর্যটন কেন্দ্রটি। অবকাশ কেন্দ্রে রয়েছে কৃত্রিম জলপ্রপাত। তার নিচে পাহাড় ঘেঁষে পাথরে বসে আড্ডা আর ওয়াকওয়ের পাশে লেকের ধারে তৈরি হচ্ছে মিনি কফিশপ। চিড়িয়াখানায় যুক্ত হয়েছে নতুন করে প্রায় ৪০ প্রজাতির প্রাণী। নতুনত্বের ছোঁয়া লেগেছে গারো মা ভিলেজেও। মাশরুম ছাতার নিচে বসে বা পাখি আকৃতির বেঞ্চে বসে সহজেই উপভোগ করা যায় পাহাড়ের ঢালে আদিবাসী জনপদের জীবনযাত্রাসহ দিগন্তজোড়া সবুজের সমারোহ। এখানে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ এবং ক্ষুদ্র নৃ গোষ্টি জাদুঘর ও কালচারার একাডেমি নির্মান করে অবকাশের বৈচিত্রে আনা হয়েছে নতুনত্ব ও ভিন্নতা। আগত দর্শনার্থীদের মুক্তিযুদ্ধ ও ক্ষুদ্র নৃ গোষ্টিদের সম্পর্কে জানাতে জাদুঘরে রাখা হয়েছে স্মৃতি বিজড়িত ইতিহাস। পাশেই রয়েছে আদিবাসী জাদুঘর। বিলুপ্তপ্রায় আদিবাসীদের জীবনমানের নানা ইতিহাস ও বৈচিত্র নজর কাড়ে পর্যটকদের। শিশুদের জন্য রয়েছে চুকুলুপি চিলড্রেনস পার্ক।

তবে করোনা সহ নানা কারণে কয়েক বছর ধরেই ওই পর্যটন কেন্দ্রটি ছিল অবহেলিত। বিশেষ করে করোনাকালিন তা বন্ধ থাকায় বন্ধ ছিল পর্যটকদের আনাগোনা। এবার করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রের মতোই গজনী অবকাশ কেন্দ্রও চালু হওয়ার পর শেরপুরের জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার কেন্দ্রটি পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হিসেবে গড়ে তুলতে নিয়েছেন নানান উদ্যোগ।

পর্যটন কেন্দ্রের সৌন্দর্যবর্ধন ও ভ্রমণপিপাসুদের বিনোদনের জন্য প্রায় ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ঝুলন্ত ব্রীজ, ক্যাবল কার ও জিপ লাইনার রাইড নির্মাণ করা হয়েছে। প্রবেশপথের পাশেই ১নং লেকের ওপর দিয়ে বসানো হয়েছে আকর্ষণীয় জিপলাইন রাইড। তার একটু সামনে কৃত্রিম জলপ্রপাতের ওপর বসানো হয়েছে ক্যাবল কার। কারটিতে উঠে পুরো পরিবার একসঙ্গে যাওয়া যাচ্ছে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে। ক্যাবল কারে চড়ে ওপর থেকে পাহাড় ও লেকের সৌন্দর্য এক সঙ্গে উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকরা।

পড়ন্ত বিকেলে ছোট ছোট নৌকায় করে ঘুরে বেড়ানো যাবে লেকটি। সেইসঙ্গে এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে হেঁটে পার হবার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ঝুলন্ত ব্রীজ। এছাড়া নতুন পরিকল্পনায় আরও যুক্ত হচ্ছে শিশু কর্নার ও জেলা ব্র্যান্ডিং কর্নার। এখানে থাকবে জেলার বিভিন্ন ইতিহাস-ঐতিহ্য সংবলিত ছবি, পুস্তক ও ভিডিও চিত্র। আর এখন যোগ হয়েছে কেবল কার ও জিপ লাইনিং। এতো কাছ থেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ইতিহাস দেখে আমি সত্যিই মুগ্ধ। গজনী অবকাশের খেলনা বিক্রেতা আব্দুস সামাদ বলেন, আগের তুলনায় এখানে পর্যটকদের আগমন অনেক বেড়েছে। আমাদের নতুন ডিসি এসে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করছেন। কয়েকটি রাইড চালু হয়েছে। এগুলোর কারণে পর্যটকও বাড়ছে। আর পর্যটক বাড়লে আমাদের বিক্রি বাড়ে। একই কথা জানান কাপড় ব্যবসায়ী মাসুদসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা।

শেরপুরের জেলা প্রশাসক সাহেদা আক্তার বলেন, অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি গজনী অবকাশ কেন্দ্রটি করোনার কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। বর্তমানে করোনার থাবা কাটিয়ে উঠায় গজনীতে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে এবং আকর্ষণীয় করে তুলতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নানা কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এরই আওতায় দৃষ্টিনন্দন ঝুলন্ত ব্রীজ, ক্যাবল কার ও জিপ লাইনিং চালু করা হয়েছে। রাইডগুলো উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।

এগুলোর মাধ্যমে পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ হবে এবং পর্যটকদের আগমনও বাড়বে বলে তার বিশ্বাস। এখানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য একটি কালচারাল সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। এলাকায় পর্যটকদের রাত যাপনের জন্য একটি হোটেল নির্মাণ কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে বিগত অন্যান্য সময়ের চেয়ে দিনদিন পর্যটকদের ভীড় বাড়ছে গজনীতে।

ঝিনাইগাতী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মনিরুল আলম ভুইয়া জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তার দিতে থানা পুলিশ পর্যটন লমএলাকায় দ্বায়িত্ব পালন করে আসছেন। তবে তিনি আগত পর্যটকদের ভারত সীমান্তের কাটাতারের বেড়ার কাছে অথবা নিরিবিলি জঙ্গলে যেতে অনুৎসাহিত করেন।

পত্রিকা একাত্তর/ আবু হেলাল