চলনবিল অধ্যুষিত নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা অঞ্চলে চলতি মৌসুমে সরিষার ভালো ফলন হচ্ছে। এ এলাকার হাটবাজারে সরিষা বিক্রিও হচ্ছে বেশ ভালো দামে। তাই সরিষার ভালো দাম ও ফলন পেয়ে খুশি চলনবিল এলাকার কৃষকরা। অতীতে এ এলাকার কৃষকরা বর্ষার পানি বিল থেকে নেমে যাওয়ার পর বোরো চারা রোপণের পূর্বপর্যন্ত প্রায় মাস দুয়েক জমি পতিত রাখতেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে তারা জমি পতিত না রেখে এ সময়ে বাড়তি ফসল হিসেবে উচ্চ ফলনশীল সরিষা চাষে ঝুঁঁকেছেন।
সরিষা চাষ করে কৃষক যে উদ্বৃত্ত অর্থ পাচ্ছেন, তা দিয়ে বোরো চাষের খরচ উঠেও অতিরিক্ত টাকা থেকেই যাচ্ছে। পাশাপাশি ব্যাপক পরিমাণ জমিতে সরিষা চাষ হওয়ায় তা দেশের ভোজ্য তেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতেও ভূমিকা রাখছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নাটোরের গুরুদাসপুর, সিংড়া, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, উল্লাপাড়া, রায়গঞ্জ, শাহজাদপুর, পাবনার চাটমােহর, ভাঙ্গড়া, ফরিদপুরসহ বৃহত্তর চলনবিল এলাকায় প্রায় ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। এ এলাকার কৃষকদের সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করতে সরকার হাজার হাজার কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে প্রণোদনার বীজ ও সার বিতরণ করেছেন। ইতোমধ্যে চলনবিলঅধ্যুষিত অঞ্চলে জমিগুলোর সরিষা পেকে গেছে। জমি থেকে সরিষা উত্তোলনে কৃষকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।
গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজিপুর ইউনিয়নের বিলসা গ্রামের কৃষক জালাল উদ্দিন বলেন, চলনবিলাঞ্চলে দ্রুত বন্যার পানি নেমে যাওয়ার কারণে আগাম সরিষার চাষ করা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, একসময় চলনবিলের কৃষকরা শুধু ইরি-বোরো এক ফসলী আবাদ করে হাজার হাজার হেক্টর জমি পতিত রাখত। কালের বিবর্তনের সাথে সাথে এ অঞ্চলের কৃষকদেরও বুদ্ধির বিকাশ ঘটেছে। তারা বিগত দেড় যুগ ধরে ইরি-বোরো, আমন, ভূট্টা, ও সরিষার আবাদে ঝুঁকেছে। গত কয়েক বছর ধরে বন্যার পানি কম ও দ্রুত মাঠ থেকে নেমে যাওয়ার ফলে সরিষার আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে।
বিলশা গ্রামের আরেক সরিষা চাষি মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, এ বছর ৭ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন তিনি। ইতোমধ্যে কিছু জমির সরিষা তুলেছেন। বিঘা প্রতি ৫ থেকে ৬ মন হারে ফলন পাচ্ছেন।
তিনি আরও জানান, এ জমি থেকে সরিষা তুলে বোরো ধান চাষ করবেন। বর্তামান প্রতি মন সরিষা ২৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কৃষি শ্রমিক মোঃ মকবুল হোসেন বলেন, প্রতিবিঘা জমির সরিষা উত্তোলন বাবদ ১,৫০০ টাকা করে পাচ্ছেন তারা। বিলব্যাসপুর গ্রামের কৃষক মো. লমির জানান, কেউ কেউ জমি চাষ করে সরিষা বপন করেন আবার কেউ কেউ বিনা চাষে পতিত জমিতে বীজ ছিটিয়ে সরিষার চাষ করেন। এবার মৌসুমের শুরুতে সরিষার খেতে পোকার আক্রমণ লক্ষ্য করা গেছে। তারপরও ফলন ভালো হচ্ছে।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ হারুনর রশিদ বলেন, এবছর গুরুদাসপুর উপজেলায় ৩শত ৪৫ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে।
এ বছর কৃষককে সরিষা চাষে ব্যাপক সচেতন করা হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মতবিনিময় সভা ও উঠান বৈঠক করেছি। সরিষা চাষের পদ্ধতি ও পোকার আক্রমন হলে কি করনীয় সে বিষয়ে কৃষকদের সচেতন করেছি। তাছাড়া কর্মকর্তারা সব সময় মাঠে থেকে কৃষককে সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছি।
পত্রিকা একাত্তর/মোঃ সোহাগ আরেফিন