বর্তমান পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রি এক অন্যতম সম্ভাবনাময় দ্বার। মানুষের দৈনন্দিন জীবন প্লাস্টিক ছাড়া কল্পনাতীত। প্রায় সকল ধরনের মোড়ক ও বোতল প্লাস্টিকের তৈরি। ব্যবহৃত প্লাস্টিকের কিছু অংশ রিসাইকেল করা হলেও বেশিরভাগই বর্জ্য হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যেই পৃথিবীর মাটি, বায়ুমণ্ডল, পানি, জীববৈচিত্র্য ও মানব স্বাস্থ্যে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এই প্লাস্টিক দূষণ।
প্লাস্টিক যেহেতু পচনশীল নয়, তাই ব্যবহারের পর যেসব প্লাস্টিক পণ্য ফেলে দেয়া হয়, তার অধিকাংশই যুগের পর যুগ একই ভাবে পরিবেশে টিকে থাকে। প্লাস্টিক দূষণ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রির অগ্রগতির জন্য একটি দেশের রাষ্ট্র এবং জনগণ উভয়ের পদক্ষেপ অত্যাবশ্যকীয়। ভৌগোলিক পরিক্রমায় বাংলাদেশের রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রি এখনো মাইলফলক স্পর্শ করতে পারেনি তবে লোয়ার স্ট্রিমে থাকা এই দেশটির রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রির সফলতা এখন সময়ের দাবি।
বর্তমানে হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রাণ আরএফএল গ্রুপ বছরে ৩২ হাজার পরিত্যক্ত প্লাস্টিক টন থেকে পণ্য রিসাইক্লিং করছে। এরফলে দেশের প্রায় ৫ হাজার একর জমি দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে। জাপানিজ পাইরোলাইসিস প্লান্টের ব্যবহার রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিকে নিয়ে যাচ্ছে এক অন্যতম শিকড়ে। নীলফামারীতে স্থানীয় যুবকরা সংগঠিত হয়ে গড়ে তুলেছেন রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রি যা অসংখ্য নারী পুরুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
যেকোনো রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে যাত্রা শুরু করার জন্য সরকার থেকে ছাড়পত্র নেওয়া অত্যাবশ্যকীয়, এছাড়া যেখানে সেখানে রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুললে জমি, খামার, পুকুর, নদী ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাথে শ্রমিকরাও ঝুঁকিতে থাকেন। সম্প্রতি জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলায় ছাড়পত্র ছাড়াই রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছেন শ্রমিকরা এবং পরিবেশ রক্ষার প্রক্রিয়ায় চক্রের মতো পরিবেশ দূষিত হচ্ছে যা কাম্য নয়।
দেশে বর্তমানে ৫ হাজার রিসাইক্লিং কারখানায় কর্মরত আছেন প্রায় ১২ লাখ কর্মী। বাংলাদেশে প্রতিবছর ৮, ২১,২৫০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার মধ্যে কেবল ৫, ২৭,৪২৫ টন প্লাস্টিক রিসাইকেল করা হয়। বাকিগুলো পড়ে থাকে সম্পূর্ণ অব্যবস্থাপনায়। বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর ২০২২ এর প্রতিবেদনে বলা হয় প্রতি বছর দেশে ৪ লাখ টন ই-বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে মাত্র ৩ শতাংশ পূনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ হয়।
বাকি ৯৭ শতাংশের ঠাঁই হয় দেশের নদী-নালা ও ভাগাড়গুলোতে। বাংলাদেশের অন্যতম বুড়িগঙ্গা নদীর ধ্বংসের কারণ এসকল প্লাস্টিক দূষণ এবং ই-বর্জ্য। একইভাবে আরো অসংখ্য গৌরবময় নদী নিশ্চিহ্নের মুখোমুখি দন্ডায়মান। তবে আশার কথা হলো রিসাইক্লিং করা দ্রব্যাদি রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও এবং রপ্তানি দ্রব্য এর অবস্থান ১২ তম।
২০২৫ সালের মধ্যে প্লাস্টিক পণ্যের পুনর্ব্যবহার ৫০ শতাংশে উন্নীত করা, ২০৩০ সালের মধ্যে ভার্জিন ম্যাটেরিয়ালের পরিমাণ ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনা এবং ২০২৬ সালের মধ্যে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের পরিমাণ ৯০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে বাংলাদেশ। সরকারের এই লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন জনগণের অংশগ্রহণ বিনা অর্জন সম্ভব নয়। প্লাস্টিক এবং ই-বর্জ্য যথাযথ ব্যবস্থাপনায় এবং সঠিক রিসাইক্লিং কারখানায় পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব জনগণের কাঁধেই। শিক্ষার্থী এবং যুবসমাজের উচিত সকলকে সচেতন করে তোলা যাতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সবুজ শ্যামল বাংলাদেশের সাক্ষী হতে পারে।