ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের সাজগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মতিচন্দ্র রায়। বয়স তার ৯০ পেরিয়েছে। এই বয়সে তার অনেক বন্ধুর কেউ অসুস্থ, কেউবা মারা গেছেন। তবে শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও ৫৫ বছর ধরে ভ্যানে করে মাটির হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করছেন মতি।
হাড়ি বিক্রেতা মতির সাথে আলাপচারিতার মাঝে জানা গেছে, দেশ স্বাধীনের আগ থেকেই হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করতেন তিনি। দেশে যুদ্ধচলাকালীন সময়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন ভারতে। স্বাধীনের পর দেশে ফিরে আবার শুরু করেন হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি। এখনও আদি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন মতি। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত এই ব্যবসা করে যেতে চান মতি।
কথা বলার ফাঁকে মাটির ঢাকনা কিনতে এসেছেন মমিনা খাতুন। তিনি জানালেন আমার শ্বশুর বাড়ি ও বাবার বাড়ি কাছাকাছি। আমি ছোটবেলা থেকেই দেখছি উনি (মতি) ভ্যানগাড়িতে করে মাটির জিনিসপত্র বিক্রি করে চলেছেন।
উপজেলার ভোগদগাজী গ্রামের বাসিন্দা আরিফুর রহমান জানান, মতি দাদা দেশ স্বাধীনের পর থেকে মাটির হাড়ি পাতিল বিক্রি করে পরিবার চালান। শেষ বয়সে এসেও তিনি মানুষের চাহিদা পূরণ করছেন। নিজে ভ্যানগাড়ি চালান এবং গ্রাম ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন।
মতি চন্দ্রের ছেলে প্রফুল্ল চন্দ্র বলেন, আমি একটি ইটভাটায় কাজ করি। এই দিয়েই আমাদের সংসার চলে। আমি বাবাকে কয়েকবার নিষেধ করেছি কিন্তু তিনি কোন বারণ শোনেননি। বাবার ভ্যান নিয়ে না বের হলে ভালো লাগে না। তাই আমি আর এখন কিছু বলি না। চেষ্টা করছি যাতে বাবা বাসায় থাকেন।
মতিচন্দ্র রায় বলেন, আগে তো বাপু পড়াশোনা ছিলোনি। ছোটবেলা থেকে অন্যজনের বাড়িত কাম করে খাচিনো।সেলা
মুই (আমি) আরেকজনের বাড়িত কাম করিবা না যায়ে এইলা ব্যবসা শুরু করিছুনু। এক সময় মাথাত করিয়া বিক্রি করিছু। তারপর লাভের টাকা দিয়া ভ্যান কিনা ওইটাত চালাহানে বিক্রি করেছু।
মোর ছেলেডা রাগ করছে মোক যে তুই যাইসনা। কিন্তু না বাহিরে গেলে মোক ভালো লাগে না। বাহির হলে দুনা লাভ। এক'শ টাকার জিনিস বিক্রি করিবা পারিলে এক'শ টাকা লাভ আসিবে। সেই তাহানে এলাও বাহির হচু। যেই দিন দেখিবেন মুই আর বাহির হওনা মনে করিবেন মুই আর নাই মারা গেছু।