রাতের অন্ধকারে নীলফামারীর ডোমারে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীকে বাড়ির পিছন থেকে তুলে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ মামলার আসামী হরেন্দ্র নাথ রায় (৩০) মামলার ছয়দিন পেরিয়ে গেলেও গ্রেপ্তার না হওয়ায় ভুক্তভোগীর পরিবার ও এলাকাবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযুক্ত আসামীকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবী সবার।
নীলফামারীর ডোমার উপজেলার পাঙ্গা মটুকপুর সরকারপাড়ায় গত ৯ই মে (সোমবার) ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে। গত ১১ই মে ভুক্তভোগী স্কুল ছাত্রীর বাবা ডোমার থানায় ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এর সংশোধন/৩ এর ৯(১) ধারায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটির অভিযুক্ত আসামী উপজেলার বোড়াগাড়ী বাজারের চটপটি ব্যবসায়ী হরেন্দ্র নাথ রায়।
মামলা সূত্রে জানা যায়, শিশুটির বাবা পেশায় একজন রিকশাচালক। তিনি ঢাকার বিভিন্ন স্থানে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। শিশুটির মা ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চাকুরী করেন। গত ৯ই মে বিকালে মেয়েটির মা তার কর্মস্থলে যায়। ভুক্তভোগী ১১ বছর বয়সী নাবালিকা মেয়ে দাদা-দাদীর সাথে বাড়িতে ছিল।সেদিন অনুমানিক রাত ৮টায় মেয়েটি বাড়ি থেকে বের হয়ে বাড়ির পিছনের টিনের দরজা লাগানোর জন্য গেলে সেখানে আগে থেকেই অবস্থানরত প্রতিবেশীমৃত সুধীর চন্দ্র রায়ের পালিত ছেলেহরেন্দ্র নাথ রায় (৩০) অতর্কিতভাবে মেয়ের কাছে এসে তার মুখ চেপে ধরে বাড়ি সংলগ্ন উত্তরদিকে জনৈক সুদাসনের বাঁশঝাড়ে নিয়ে যায়।
মামলার সুত্রে আরও জানা যায়, সেখানে নাবালিকা মেয়েটিকে জোরপূর্বক মাটিতে শোয়াইয়ে শিশুটির ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষন করে হরেন্দ্র নাথ রায়। মেয়েটি চিৎকার করার চেষ্টা করলে আসামী তার হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে মুখ থেকে আসামীর হাত সরিয়ে চিৎকার করতে থাকলে, আসামী হরেন্দ্র মেয়েটিকে ছেড়ে দিয়ে সেখান থেকে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। পরে মেয়েটি পরিবারের লোকজন সহ সাক্ষী মো. দুলাল হোসেন (৬৫), মােছা. আমিনা বেগম (৫৮), মাে. আনছার আলী (২৫) কে ঘটনার বিষয়ে বলে। এসময় মেয়েটি শারীরিকভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। পরে সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে নীলফামারী সদর আধুনিক হাসপাতালে নেওয়া হয়।
মেয়ের বাবা জানান, মামলার পর গ্রাম পুলিশ দুলাল আমাকে বলে ঘটনাটা বেশি বাড়াবাড়ি না করে মীমাংসায় আসেন, আমরা আপনাকে টাকা নিয়ে দেবো। ধর্ষকের চাচাতো ভাই মনোরঞ্জনও আমাদের হুমকি দিয়ে বলেন,তোমাদের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেবো। আমরা ধর্ষকের বিচার চেয়েছি এটা কি আমরা অপরাধ করে ফেলেছি? ঘটনার সাথে আরো যারা যারা জড়িত আমি সবাইকে গ্রেপ্তার করে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।
নীলফামারী সদর আধুনিক হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. জাকিয়া জেনী জানান, হাসপাতালে ভর্তিরত স্কুল ছাত্রীর মাঝে ধর্ষণের কিছুটা আলামত পাওয়া গেছে।
ধর্ষন মামলার অভিযুক্ত আসামী হরেন্দ্র নাথ রায়ের স্ত্রী আলো (২০) বলেন, ধর্ষনের ব্যাপারে আমরা কিছু জানিনা। আমার স্বামী তাদের কাছে ধার বাবদ ৬০০ টাকা পেতো, সেই টাকা আনতে আমার স্বামী তাদের বাড়ি যায়। আমার স্বামী ৫/৬ দিন থেকে বাড়িতে নাই, আর কোথায় গেছে আমরা সে ব্যাপারে কেউ জানিনা। দুই ছেলে নিয়ে আমাদের পরিবারের খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে, আমি আমার স্বামীর সন্ধান চাই।
হরেনের প্রতিবেশী মনোরঞ্জন রায় জানান, আমাদের ওয়ার্ডের মিন্টু মেম্বার ঘটনা ঘটার পর সেই রাতেই আসামী হরেন্দ্র নাথ রায়ের কাছে টাকা নিয়ে তাকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে।
মটুকপুর সরকারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, ঘটনাটি ঈদের ছুটি চলাকালীন সময়ে ঘটেছে। স্কুল খুলে বাচ্চাটিকে ক্লাসে না পাওয়ায় আমরা খোঁজ নিয়ে ধর্ষনের ব্যাপারটি জানতে পারি। সে আমাদের স্কুলের পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্রী। আমরা শিক্ষকরা ঘটনাটির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
এদিকে স্থানীয় ইউপি সদস্য মিন্টু তার বিরুদ্ধের অভিযোগসমূহকে ভিত্তিহীন মন্তব্য করে বলেন, মেয়ের চাচা ঢাকা থেকে মোবাইলে আমাকে দুর্ঘটনার সংবাদটি জানালে প্রথমে আমি অভিযুক্ত আসামী হরেন্দ্রর বাড়িতে যাই। আমি তার কাছে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে, সে বলে ঘটনাটি মিথ্যে। এরপর আমি ভুক্তভোগী মেয়ের বাড়িতে গিয়ে মেয়ের অবস্থা দেখে দ্রুত মেডিকেলে পাঠাই। ঘটনা আমি তাৎক্ষণিকভাবে আমার ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে জানালে তিনি ডোমার থানায় যোগাযোগ করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ আসে, তাদের নিয়ে আবারো অভিযুক্তের বাড়িতে গিয়ে খোঁজাখুঁজির পর হরেন্দ্র নাথ রায়কে পাওয়া যায়নি।
এলাকাবাসীরা একত্রিত হয়ে বলেন, ডোমার থানায় মামলা করার ৬ দিন পেরিয়ে গেলেও আসামি ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আসামী হরেন্দ্র নাথ রায় সহ ঘটনার সাথে জড়িতদের আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচার চাই।
ঘটনার ব্যাপারে ডোমার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, মামলা এজাহার ভুক্তের পর থেকে আমরা আসামীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। আসামী আত্মগোপনে রয়েছে। আমরা গ্রেপ্তারের জন্য ডিজিটালি ও ম্যানুয়ালি চেষ্টা চালাচ্ছি।
পত্রিকা একাত্তর/রিশাদ