নড়বড়ে কাঠের ব্রিজ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যায় শিশুরা

নিজস্ব প্রতিনিধি

নিজস্ব প্রতিনিধি

১২ মে, ২০২৫, ৬ ঘন্টা আগে

নড়বড়ে কাঠের ব্রিজ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যায় শিশুরা

নড়বড়ে কাঠের ব্রিজ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিনই পারাপার হচ্ছে স্কুলগামী কোমলমতি শিশুসহ প্রায় সাড়ে চারশ মানুষ। এই ব্রিজ দিয়ে পার হতে গিয়ে এরই মধ্যে শিশু শিক্ষার্থীরা পড়ে গিয়ে আহতও হয়েছেন বেশ কয়েকবার।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালন্দর ইউনিয়নের বরুনাগাঁও দিয়ে বয়ে যাওয়া চারাবান খাল নদীর ওপর কাঠের ব্রিজ পাড়ি দিয়ে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পে (গুচ্ছগ্রাম) বসবাসরত বাসিন্দারা এবং ওই এলাকার প্রায় সাড়ে চারশ মানুষ প্রতিদিনই যাতায়াত করেন। ভারি যানবাহন চলাচল করতে না পারায় দুই কিলোমিটার ঘুরে শহরে প্রবেশ করতে হয় সেখানকার মানুষদের। এতে যে কোনো সময় নড়বড়ে ব্রিজটি ভেঙে পড়ে প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। জরুরি ভিত্তিতে এ ব্রিজটি মেরামত করার জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।

জানা গেছে, সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের বিকল্প রাস্তা না থাকায় চার বছর আগে স্থানীয় ইউপি সদস্য আলাউদ্দীনসহ কয়েকজন ব্যক্তি তাদের নিজ উদ্যোগে বরুনাগাঁও চারাবান খাল নদীর ওপর একটি কাঠের ব্রিজ নির্মাণ করেন। এ ব্রিজটি নির্মাণের পর গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে যাতায়াত করতে শুরু করেন। দীর্ঘদিন ধরে ব্রিজটি ব্যবহার করা হয়েছে, যার কারণে কাঠগুলো ভেঙে নড়বড়ে হয়ে গেছে। এখন ব্রিজটি পার হওয়ার সময় এটি কেঁপে ওঠে, ফলে অনেক অভিভাবক তাদের শিশুসন্তানদের নিয়ে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন এই ব্রিজটি পার করে স্কুলে পাঠাচ্ছেন। ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় পথচারীরা পারাপারের সময় আতঙ্কিত থাকেন। ইতোমধ্যে স্কুল যাওয়ার পথে কয়েকজন শিশু শিক্ষার্থী এই সেতু দিয়ে পার হওয়ার সময় নিচে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন।

এলাকাবাসীরা জানান, অস্থায়ী এই কাঠের ব্রিজ দিয়ে মানুষ কোনোভাবে পার হলেও ভারি যানবাহন চলতে পারে না। স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণের জন্য বারবার দাবি জানানো হলেও কেউ কোনো গুরুত্ব দেয়নি। স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে। এখন নদীতে পানি নেই, তবে বর্ষাকালে ব্রিজটি আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে, তখন কিভাবে যাতায়াত করা যাবে? তাই সরকারের কাছে অনুরোধ, দ্রুত এই ভাঙা ব্রিজটি মেরামত অথবা নতুন ব্রিজ নির্মাণ করা হোক।

ফারিয়া, মিম ও জিম নামে কয়েকজন কলেজ শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, "এই কাঠের ব্রিজ দিয়ে আমাদের প্রতিদিন কলেজ যেতে হয়। ব্রিজ দিয়ে যাওয়ার সময় খুব ভয় লাগে, কারণ এটা ভাঙা। এখন তো বন্যা নেই, কিন্তু বন্যার সময় আমাদের ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়। তখন যাতায়াতের কোনো রাস্তা থাকে না। আমরা পড়াশোনা করি, তাই শহরে যেত হয়, তবে বন্যার সময় এই ভাঙা ব্রিজ দিয়ে যেতে পারি না। দ্রুত ব্রিজটি ঠিক করে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানাই।"

গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা ঢাকা পোস্টকে বলেন, "এই ব্রিজটি তাড়াতাড়ি ঠিক করে দিলে আমাদের ছেলে-মেয়েরা নির্ভয়ে স্কুল যেতে পারবে। বিশেষ করে বর্ষাকালে আমাদের খুবই অসুবিধা হয়।"

ঠাকুরগাঁও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মামুন বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, "সরকারের গুচ্ছগ্রামসহ স্থানীয়দের যাতায়াতের একমাত্র কাঠের ব্রিজটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, তা আমরা জানি। এর আগে স্থানীয়রা আমাদের এ ব্যাপারে অবগত করেছিল। ইতোমধ্যে আমরা কয়েকটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এগুলো পাস হয়ে আসলেই আমরা কয়েকটি ব্রিজে হাত দেব।"

এদিকে, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খাইরুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, "বরুনাগাঁও গুচ্ছগ্রাম ঠাকুরগাঁও সদরের একটি বৃহৎ গুচ্ছগ্রাম। তাদের চলাচলের জন্য কাঠের ব্রিজটি খুবই নাজুক অবস্থায় আছে, আমরা জানতে পেরেছি। এটা কিভাবে সংস্কার করা যায়, অচিরেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং সালন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে দ্রুতই মেরামত করে দেওয়া হবে।"

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news