প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অধিকারী দুবাংলার অহংকার সৌন্দর্যে সুন্দরবন অপরূপা, সুন্দরবন যেন ভ্রমণপিপাসুদের হাতছানি দিয়ে ডাকে, বছরজুড়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করে চলেছে বিশ্বের একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ এই বন।
বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের অববাহিকায় গড়ে উঠেছে এই বিশ্ব ঐতিহ্য। যা জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। ‘বাঘ মামা’খ্যাত দেশে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থলও এই বনে। সুন্দরবন প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক দেয়াল হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। কয়েক লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা চলছে সুন্দরবনের ওপর নির্ভর করে। বাঘ, হরিণসহ বন্য প্রাণী শিকারিদের তৎপরতাও থেমে নেই সুন্দরবনে। জলদস্যু-বনদস্যুদের যেন অভয়ারণ্য বনটি,তবে কিছু অসাধু বনরক্ষক কর্মী ও জেলেদের কারণে বনজদ্রব্যের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।
আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি, সুন্দরবন দিবস। ২০০২ সাল থেকে সুন্দরবনসংলগ্ন উপকূলীয় জেলাগুলোতে ‘সুন্দরবন দিবস’ পালন হয়ে আসছে। প্রতিবারের মতো এবারও বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরাসহ সুন্দরবনসংলগ্ন জেলায় নানা আয়োজনে সুন্দরবন দিবস পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
২০০২ সাল থেকে সুন্দরবন সংলগ্ন জেলাগুলোতে ১৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন দিবস পালন করা হচ্ছে।
সুন্দরবনের মোট আয়তন ছয় হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে স্থলভাগের পরিমাণ চার হাজার ১৪৩ এবং জলভাগ এক হাজার ৮৭৩ বর্গকিলোমিটার। অষ্টাদশ শতাব্দীতে সুন্দরবনের আয়তন ছিল বর্তমানের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। ১৮৭৮ সালে সুন্দরবনকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। জাতিসংঘের ইউনেস্কো কমিশন ১৯৯৭ সালে সুন্দরবনের তিনটি অভয়ারণ্যকে বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা ঘোষণা করে। সুন্দরবন জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ একটি ইকোসিস্টেম। দেশের তিন দশমিক ১৪ মিলিয়ন লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভরশীল। ২০০১ সালে সুন্দরবনের প্রশাসনিক এলাকা দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। পূর্ব বন বিভাগের কার্যালয় বাগেরহাটে ও পশ্চিম বন বিভাগের কার্যালয় খুলনায়।
সুন্দরবনের নামকরণ হয় সুন্দরবনের প্রধান উদ্ভিদ প্রজাতি ‘সুন্দরী গাছ,কারো কারো মতে, সুন্দরী গাছের নাম অনুসারে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা বনের নাম হয়েছে সুন্দরবন,আবার সমুদ্রের কাছে অবস্থান হওয়ায় ‘সমুন্দর’ শব্দ হয়ে প্রথমে ‘সমুন্দবন’ ও পরে ‘সুন্দরবন’ নামকরণ হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।
সুন্দরবনে জীববৈচিত্র্যে ভরপুর,এই সুন্দরবনে ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল ও ১৩ প্রজাতির অর্কিড রয়েছে। বনজদ্রব্যদের মধ্যে সুন্দরবনের প্রধান বনজদ্রব্য সুন্দরী, পশুর, গেওয়া, ধুন্দুল ও কাঁকড়া গাছ। এ ছাড়া গোলপাতা, হেতাল, ছন, মাছ, মধু ইত্যাদি রয়েছে।
এছাড়াও দেশের মধ্যে বণ্য প্রাণীর বৃহত্তম আবাসস্থল সুন্দরবন,এখানে ৩৭৫ প্রজাতির বেশি বণ্য প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৩১৫ প্রজাতির পাখি ও ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী।
সুন্দরবনের প্রধান বণ্য প্রাণী হচ্ছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল হরিণ, বন্য শূকর, বানর, কুমির, ডলফিন, কচ্ছপ, উদবিড়াল, মেছোবিড়াল ও বনবিড়াল ইত্যাদি।
পত্রিকা একাত্তর/মোঃ আলফাত হাসান