সাংবাদিকতা একটি মহৎ পেশা। শিক্ষকতা, চিকিৎসাসেবার মতই মহৎ। কিন্তু দিন দিন যেন সাংবাদিকতার আবেদন নিবেদন কমে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের কাছে এ পেশার গ্রহণযোগ্যতায় ধ্বস নেমেছে। সাংবাদিকদের প্রতি সমাজের নানা শ্রেণির মানুষের সম্মান প্রদর্শন যেন অনেকটা তলানিতে ঠেকেছে। বিশেষ করে মফস্বল অঞ্চলের তৃণমূল পর্যায়ে সাংবাদিকদের সম্মান প্রদর্শন তো দূরের কথা অনেক টা তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের পাত্রে পরিণত হয়েছে।
কারণ অনুসন্ধানে দেখা যায় অশিক্ষিত, ধান্ধাবাজ টাউট বাটপার চিটার শট, প্রবঞ্চকরা সাংবাদিকতার কার্ড নিয়ে সাধারণ মানুষকে ব্লাকমেইল করে। যার দরুণ মূল ধারার সাংবাদিকদেরও এখন মানসম্মান নিয়ে চলাফেরা দায় হয়ে পড়েছে।
বিভিন্ন পত্রিকা অফিসগুলো (সার্কুলেশন যাদের নাই বললেই চলে) কোন রকম বাচ বিচার ছাড়া সাংবাদিকতার যে কাউকে কার্ড ধরিয়ে দেয়। অবশ্য এতে সংশ্লিষ্ট পত্রিকার নির্বাহি সম্পাদক, বার্তা সম্পাদক এসব কার্ড অনৈতিকভাবে টাকার বিনিময়ে দেয় বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। কার্ড নিয়েই এরা শুধু সাংবাদিকতার নামে ধান্ধাবাজী করতে চায়।
এসব নামধারী সাংবাদিকরা অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করতে দিবানিশি চেষ্টা করে। আন্ডরগ্রাউন্ডের পত্রিকা হলেও নিজেকে পরিচয় দেয় পাঠকপ্রিয় বা দর্শকপ্রিয় পত্রিকা বা টিভি চ্যানেলের। বিশেষ করে এসব তথাকথিত সাংবাদিক বিভিন্ন চরাঞ্চলে গিয়ে মানুষকে ভয় ভীত দেখিয়ে টাকা কামই করে -এধরণের অনৈতিক টাকার বখরা নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি হাতহাতি হয়। যা সচেতন মানুষের চোখ এড়ায়না।
এরা পড়ালেখায় প্রাথমিকের গণ্ডিও অনেকে পার হতে পারেনি। সাংবাদিক হিসেবে নিয়োগের জন্য সম্পাদক বরাবর দরখাস্ত লেখার যোগ্যতাও এদের নেই। যোগ্যতা শুধু তল্পিবাহক হিসেবে কারো নিউজ কাট/কপি পেস্ট করা। এরা স্রেফ ধান্ধাবাজ, তাদের নেই কোন দায়বদ্ধতা জনগণে প্রতি, সমাজের প্রতি, রাষ্ট্রের প্রতি। ব্যক্তি বা সমাজের যে কোন কিছুতে এরা নাক গলায়। পারিবারিক সামাজিক সর্বত্র। দায়বদ্ধতা বা বাচ বিচার বলতে এদের কাছে কিছু নেই। নিউজ লেখার জন্য এরা সৃজনশীল সাংবাদিকদের তল্পিবাহক হিসেবে নিজেকে উজার করে দেয়।
সাংবািদকতা পেশার ইজ্জত সম্মান তথাকথিত এসব টাউট বাটপারদের হাতে কবর দেওয়া হয়েছে। একটি উপজেলায় গড়ে তিন থেকে চারশ সাংবাদিক আছে। তাদের মধ্যে দশ থেকে পনেরজন দেশ জাতির প্রতি দায়বদ্ধ সৃজনশীল সংবাদকর্মী। বাকি সব ধান্ধাবাজ টাউট বাটপার। বাকী সবের কলম ভেঙে যাবে কিন্তু কলম থেকে নিউজের 'ন' ও আসবে না।
হকার, ড্র্রাইভার, চানাচুর কোম্পানীর ডেলিভারীম্যান, চোচা, লোভী অশিক্ষিত মূর্খরা মিডিয়া অঞ্চল দখল করে ফেলেছে। ফলে যা হবার তাই হয়েছে। আর এসব তথাকথিতদের পিছনে অনেক সিনিয়র সাংবাদিকদের ঘোরতে দেখা গেছে। ধান্ধাবাজির ভাগ পেতে।
কাকের মাংশ কাকে খায় না - এমন প্রবাদ থাকলেও সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে এ কথা মিছে। গত কয়েক বছর আগে দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিকদের ঝগড়া পত্রিকায় পাতায় আমরা দেখেছি। এখনও তাদের অনেকের মধ্যে স্নায়ু যুদ্ধ চলছে। মিডিয়া তথা সাংবাদিকরা রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। এ স্তম্ভটির ভিত যদি মজবুত টেকসই না হয় তাহলে রাষ্ট্র কাঠামো টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই তাঁদেরকে দেশের স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্বের ব্যাপারে আপোষহীন থাকতে হবে।
মফস্বল অঞ্চলের মিডিয়াকর্মীদের প্রচুর পড়াশোনা করা দরকার। নিয়মিত প্রত্যেকটি জাতীয় পত্রিকার পাতায় নজর দিতে হবে। আমার মতে প্রতি উপজেলার প্রেসক্লাবগুলোতে একটি করে লাইব্রেরী থাকা প্রয়োজন হলেও কিছু প্রেসক্লাবে দেখেছি একটি বাংলা অভিধানও নেই, যা সত্যি দুঃখজনক। যা কোনভাবে কাম্য নয়, নয় গ্রহণযোগ্য।
লেখক: এমএম নুর উল্লাহ আরিফ
প্রভাষক, শশিভূষণ বেগম রহিমা ইসলাম কলেজ
ও চরফ্যাশন থানা প্রতিনিধি, পত্রিকা একাত্তর।