প্রত্যেক জীবিত সত্তাকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে—এ সত্য কোরআনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।” (সুরা আলে ইমরান: ১৮৫) আবার অন্য আয়াতে আল্লাহ ঘোষণা করেন, জমিনের ওপর যা কিছু রয়েছে সবই ধ্বংস হবে এবং শুধু চিরঞ্জীব আল্লাহ তায়ালাই অবশিষ্ট থাকবেন। (সুরা আর-রহমান: ২৬-২৭) অর্থাৎ মানুষ, জিন, প্রাণী, ফেরেশতা—সকল সৃষ্টিই মৃত্যুর সামনে সমান; কেবল আল্লাহই অমর।
মৃত্যুর মুহূর্তে প্রতিটি সৃষ্টির রুহ কবজ করার জন্য আল্লাহ তায়ালা বিশেষ একটি ফেরেশতাকে নিয়োগ করেছেন, যিনি মালাকুল মাওত নামে পরিচিত। কোরআনে একাধিক আয়াতে তাঁর দায়িত্ব ও কাজের বর্ণনা এসেছে। আল্লাহ বলেন, “তোমাদের মৃত্যু দেবে সেই ফেরেশতা যাকে তোমাদের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে।” (সাজদাহ: ১১) অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ফেরেশতােরা কারো মৃত্যু ঘটাতে কোনো ত্রুটি করে না। (সুরা আন’আম: ৬১) কাফিরদের রুহ গ্রহণের সময় ফেরেশতারা তাদের মুখ ও পেছনে আঘাত করে কঠোর ভাষায় বলে, জাহান্নামের আগুনের শাস্তি স্বাদ গ্রহণ করো। (আনফাল: ৫০)
এমন স্পষ্ট বর্ণনা থেকে প্রশ্ন ওঠে—মালাকুল মাওত কি কেবল মানুষের রুহই কবজ করেন, নাকি সকল প্রাণীরও? হাদিসে এর স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়। একবার মালাকুল মাওত নবী করিম (সা.)-এর কাছে বলেন, আল্লাহর অনুমতি ছাড়া আমি এমনকি একটি মশার প্রাণও গ্রহণ করতে পারি না। অর্থাৎ ক্ষুদ্রতম প্রাণীও তাঁর দায়িত্বের বাইরে নয়।
ইমাম কুরতুবি (রহ.) ব্যাখ্যা করেন, এ হাদিস থেকে নিশ্চিতভাবে বোঝা যায় যে, জীবিত প্রতিটি প্রাণীর রুহ কবজের দায়িত্বই মালাকুল মাওতকে দেওয়া হয়েছে। ইমাম মালিক ইবনে আনাস (রহ.)-কে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, মশার প্রাণও কি মালাকুল মাওত কবজ করেন—তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, “মশার কি প্রাণ আছে?” উত্তরে যখন ‘হ্যাঁ’ বলা হয়, তিনি বলেন, তবে এর প্রাণও অবশ্যই মালাকুল মাওতই কবজ করেন। তিনি সুরা আজ-জুমার, আয়াত ৪২ উল্লেখ করেন, যেখানে বলা হয়েছে—আল্লাহ আত্মাকে তার মৃত্যুকালে কবজ করেন।
সব মিলিয়ে কোরআন ও হাদিসের আলোকে আলেমদের সিদ্ধান্ত হলো—মালাকুল মাওত শুধু মানুষের নয়, প্রতিটি জীবের রুহই আল্লাহর নির্দেশে কবজ করেন, যত ক্ষুদ্র প্রাণীই হোক না কেন। কারণ মৃত্যু আল্লাহর নির্ধারিত একটি চূড়ান্ত সত্য এবং সৃষ্টিজীবনের সমান বাস্তবতা।

