বিয়ে করতে অনাগ্রহী মানুষের সংখ্যা সাম্প্রতিক সময়ে দ্রুত বাড়ছে। আর যারা বিয়ে করছেন, তাদের অনেকেই সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ীভাবে ধরে রাখতে পারছেন না। মুসলিম সমাজে পরিবার, বিয়ে এবং বৈধ সম্পর্ক রক্ষা করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হলেও, বাস্তবে বহু পরিবারেই বিবাহবন্ধন এখন বেশ দুর্বল হয়ে পড়ছে।
বৈবাহিক সম্পর্ক দৃঢ় হয় না কেন?
বিয়ে ও বৈধ সম্পর্কে বাধা তৈরি হওয়ার অন্যতম কারণ ভুল মানসিকতা। সম্পদ, বংশ, সৌন্দর্য, পেশা—এসবকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার ঘাটতি স্পষ্ট হচ্ছে। জীবনদৃষ্টির অপরিপক্বতাও এই সমস্যার বড় কারণ।
এর পাশাপাশি অনেকে পারস্পরিক সহযোগিতা ভুলে নিজের সুবিধা–অসুবিধাকেই আগে রাখেন। অথচ বিয়ে মানেই একে অপরকে বুঝে চলা, দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়া, সহমর্মিতা দেখানো এবং সুখ–দুঃখ একসঙ্গে বহন করা। যখন শুধুই নিজের স্বার্থকে প্রধান করা হয়, তখন দাম্পত্য জীবন স্বাভাবিকভাবেই দুর্বল হয়ে পড়ে।
শুধু তরুণরা নয়, বহু অভিভাবকও সন্তানের বিয়েতে নিজেদের সামাজিক মর্যাদা বা আভিজাত্যকে অগ্রাধিকার দেন। এতে প্রকৃত প্রয়োজন ও বাস্তবতা চাপা পড়ে যায়। বিয়ের পরও কেউ কেউ “আমি আর আমার স্বামী/স্ত্রী”–এই সংকীর্ণ ধারণায় চলে গিয়ে আত্মীয়তার বন্ধন দুর্বল করে ফেলেন, এমনকি বাবা–মাকেও দূরে সরিয়ে দেন।
দাম্পত্য দৃঢ় করবে যে দুই গুণ
এই সংকট কাটিয়ে উঠতে দুইটি গুণ সবচেয়ে প্রয়োজন—শোকর (কৃতজ্ঞতা) এবং সবর (ধৈর্য)।
শোকর মানে আল্লাহর প্রদান করা নেয়ামতগুলোকে মূল্য দেওয়া। মানুষ যতই অভাবের কথা ভাবুক, তার জীবনে আল্লাহর অসংখ্য অনুগ্রহ রয়েছে—এই বোধ হৃদয়ে রাখা জরুরি।
সবর মানে জীবনের কঠিন সময়কে আল্লাহর পরীক্ষা হিসেবে গ্রহণ করা এবং তা আত্মউন্নয়নের সুযোগ হিসেবে দেখা।
এই দুই গুণ ছাড়া আধ্যাত্মিক উন্নতি সম্ভব নয়, দাম্পত্য জীবনও স্থায়ী সুখ ও শান্তি লাভ করতে পারে না।
মুসলিম মনীষীদের জীবনীতে এ দুই গুণের দারুণ উদাহরণ পাওয়া যায়। এক বৃদ্ধ দম্পতি জীবনের শেষ সময়ে বলেছেন—ধৈর্য এবং কৃতজ্ঞতাই তাদের দাম্পত্যকে টিকিয়ে রেখেছে। স্ত্রী বলেছিলেন—তিনি শহরের সবচেয়ে সুন্দরী ছিলেন, তবুও সবার পছন্দ না এমন একজনকে বিয়ে করেছিলেন এবং ধৈর্য ধরে সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। স্বামী বলেছেন—আল্লাহ যে তাকে এমন সঙ্গী দিয়েছেন, সে জন্য তিনি সবসময় কৃতজ্ঞ ছিলেন।
এই দুই গুণই মানুষের জীবনের শক্ত দুই ডানা—যে ডানা মানুষকে আল্লাহর নৈকট্যের দিকে নিয়ে যায়।
এই দুই গুণ যে কারণে জরুরি
অনেকেই "পারফেক্ট" সঙ্গীর অপেক্ষা করতে করতে জীবনের বড় সময় পার করে ফেলে। অথচ পৃথিবীতে কেউই পুরোপুরি নিখুঁত নয়। তাই বিয়ের পর সম্পর্ক জোরালো রাখতে প্রতিদিন কৃতজ্ঞতা ও ধৈর্য ধারণ করা অত্যন্ত জরুরি।
দাম্পত্য জীবনে যতই কষ্ট আসুক, তার মধ্যে শিক্ষার সুযোগ থাকে। আর জীবনে যত অভাবই থাকুক, মনে রাখতে হবে—আল্লাহর নেয়ামত সবসময় আমাদের চারপাশে রয়েছে।
আমাদের করণীয়
নিজের সুবিধাকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং নৈতিকতা–আদর্শের দুর্বলতা—এই দুই রোগ মুসলিম পরিবারের ভিত দুর্বল করে দিচ্ছে। পরিবার দুর্বল হলে সমাজও দুর্বল হয়। তাই সমাজ ও ভবিষ্যৎ রক্ষায় বিয়ে ও বৈধ সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা অত্যন্ত জরুরি। এ বিষয়ে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে।

