নফসের প্ররোচনায় মানুষ যখন ভুল করে বসে, তখন মনে প্রশ্ন জাগে—এই পাপ থেকে কি মুক্তি মিলবে? আবার কি নিষ্কলুষ জীবনে ফেরা সম্ভব? এ প্রশ্নের জবাব আল্লাহ তায়ালা নিজেই দিয়েছেন পবিত্র কোরআনে। তিনি বলেন—
“যে তওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে—আল্লাহ তাদের গুনাহগুলোকে নেকি দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সুরা ফুরকান : ৭০)
এই আয়াতে শুধু গুনাহ মুছে দেওয়ার কথা নয়; বরং বলা হয়েছে—আল্লাহ গুনাহকেই নেকিতে রূপান্তর করে দেন। আর এই ক্ষমতা শুধু আল্লাহ তায়ালারই।
গুনাহ কীভাবে নেকিতে পরিণত হয়?
মুফাসসিরদের ব্যাখ্যায় এখানে দুই ধরনের মত পাওয়া যায়।ইবনে আব্বাস ও হাসান আল-বাসরি (রহ.) বলেন—গুনাহ নেকিতে পরিবর্তনের অর্থ হলো কুফর থেকে ইসলাম, দুর্বল ঈমান থেকে দৃঢ় ঈমান, হারাম সম্পর্ক থেকে বৈধ সম্পর্ক (বিবাহ), বিদআত থেকে সুন্নাহর দিকে ফিরে আসা।
অন্য আলেমদের মতে—এটি আক্ষরিকভাবেও সত্য। অর্থাৎ আল্লাহ চাইলে মানুষের নিবন্ধিত গুনাহগুলোই নেকিতে রূপান্তর করে দেন। মহান আল্লাহর জন্য এমন কিছুই অসম্ভব নয়।
যে হাদিসে গুনাহ নেকিতে রূপান্তরের ঘটনা এসেছে
এ বিষয়ের সবচেয়ে সুন্দর ব্যাখ্যা পাওয়া যায় এক হাদিসে—যা বর্ণনা করতে গিয়ে মহানবী (সা.) মুচকি হেসেছিলেন। সাফওয়ান ইবনু মুহরিয (রহ.) বলেন—
এক ব্যক্তি ইবনু ওমর (রা.)–কে জিজ্ঞেস করলেন, নাজওয়া (বান্দা ও আল্লাহর গোপন কথা) সম্পর্কে আপনি রাসুল (সা.) থেকে কী শুনেছেন?
ইবনু ওমর (রা.) বললেন—
“আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি—কিয়ামতের দিনে মুমিনকে তার রবের নিকটে আনা হবে। আল্লাহ তার ওপর পর্দা টানবেন এবং তার পাপ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। আল্লাহ বলবেন—‘তুমি কি তোমার পাপ সম্পর্কে জান?’ বান্দা উত্তর দেবে—‘হে রব! আমি জানি।’
এরপর আল্লাহ বলবেন—‘দুনিয়াতে আমি এগুলো লুকিয়ে রেখেছিলাম, আর আজ আমি তোমাকে সব পাপ থেকে মুক্ত করে দিলাম।’ তারপর তার নেকির আমলনামা তাকে দেওয়া হবে।”
এ কথা শুনে বান্দা খুশিতে বলবে—“হে আল্লাহ! আমার বড় গুনাহগুলো কোথায়? সেগুলো তো দেখি না!”
(অর্থাৎ সে ভাববে—সেগুলো হয়তো নেকিতে বদলে গেছে।)
এই দৃশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে নবীজি (সা.) এতটাই আনন্দিত হন যে, তার উজ্জ্বল দাঁত পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল। মানুষের প্রতি আল্লাহর এই অসীম দয়া—এটাই তার হাসির কারণ ছিল। (সহিহ মুসলিম)
কেন এই হাদিস এত শক্তিশালী?
কিয়ামতের দিনে মানুষের প্রকাশ্য–গোপন সব কাজই সামনে আসবে। সেখানে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। সেই ভয়াবহ দিনের কথা ভেবে নবীজি (সা.) চান—আমাদের হিসাব যেন গোপনে হয়। কারণ জনসমক্ষে হিসাব দেওয়া লজ্জার, ভয়ঙ্কর ও কঠিন।
যেমন আমরা পরিবার নিয়ে টিভি দেখতে গিয়ে হঠাৎ অশোভন দৃশ্য এলে লজ্জায় চ্যানেল বদলাই—কিয়ামতের লজ্জা হবে এর হাজার গুণ বেশি।
কিন্তু এই হাদিস আবার আশার আলো দেখায়—গুনাহ যত বড়ই হোক, তওবার দরজা কখনো বন্ধ হয় না। আন্তরিকভাবে ফিরে আসলে আল্লাহ শুধু ক্ষমাই করেন না—পাপকেও নেকিতে বদলে দেন।

