ইসলাম স্বভাবতই করুণা ও দয়ার ধর্ম। বর্তমান অস্থিরতার সময়ে ইসলামী শিক্ষাই মানুষকে শান্তি ও স্থিরতা দেয়। খ্রিস্টান ধর্মে আদম ও হাওয়া (আ.)–এর ভুলকে মানবজাতির উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া পাপ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয় এবং সেই পাপ থেকে মুক্তির জন্য ঈসা (আ.)–এর ক্রুশবরণকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। কোরআন জানায়—আদম ও হাওয়া (আ.) ভুল করেছিলেন, পরে ক্ষমা চাইলেন, আল্লাহ তাদের ক্ষমা করলেন। তাই ইসলামে জন্মগত পাপের ধারণা নেই; বরং মানুষ পৃথিবীতে আসে স্বভাবগতভাবে পবিত্র হয়ে।
পাপ ও তওবা
হাদিসে উল্লেখ আছে—মানুষ ভুল করবেই, এটি তার স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। তবে আল্লাহ পাপকে অপছন্দ করেন, মানুষকে নয়। ইসলামে স্পষ্ট বলা হয়েছে—আল্লাহ বান্দার প্রতি সবচেয়ে দয়ালু। তাই কেউ পাপ করে ফেললেও যদি আন্তরিক তওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন। তওবার দরজা সবসময় খোলা থাকে; জান্নাতের যেসব দরজা খোলে-বন্ধ হয়, তওবার দরজাটি কখনোই বন্ধ হয় না।
কোরআনে আল্লাহ বলেন,“নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকে তাদেরও ভালোবাসেন।” (বাকারা ২২২)
আরও বলেছেন,“যে তওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে—আল্লাহ তাদের গুনাহগুলোকে নেকিতে রূপান্তরিত করবেন।” (ফুরকান ৭০)
নবীজি (সা.) বলেন—“হে মানুষ, তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করো; আমি নিজেও প্রতিদিন একশবার ক্ষমা চাই।” (বুখারি)
অন্য হাদিসে বলেন—“যদি তোমরা পাপ না করতে, আল্লাহ এমন এক জাতি সৃষ্টি করতেন যারা পাপ করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে, আর আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন।” (মুসলিম)
পাপীর বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি
কোরআন ও হাদিসের ব্যাখ্যায় স্পষ্ট—আল্লাহ সব সৃষ্টির প্রতিপালক; মুসলিম–অমুসলিম, নেককার–পাপী সবাই তাঁর বান্দা। কোরআনের শুরুতেই আল্লাহকে বলা হয়েছে “সমস্ত জগতের রব”—অর্থাৎ তাঁর করুণা সবার প্রতি বিস্তৃত। তিনি মন্দ কাজকে অপছন্দ করেন, কিন্তু মানুষকে ঘৃণা করেন না।
হিসাব-নিকাশের দিন পাপীর অবস্থা
ইসলামের বিশ্বাস অনুযায়ী, কেয়ামতের দিন প্রত্যেক মানুষ তার নিজের কাজের হিসাব নিজেই দেবে। কেউ কারো বোঝা বহন করবে না। যার নেকির পাল্লা ভারি হবে সে সফল হবে, আর যার পাপ ভারি হবে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আল্লাহর বিচার হবে একেবারে ন্যায়বিচারপূর্ণ।
মনে রাখুন
আল্লাহ তার বান্দাকে ভালোবাসেন—সে নেককার হোক বা পাপী। আল্লাহ কখনো নিজের সৃষ্টির প্রতি বিমুখ হন না; বরং তাঁর রহমত ও অনুগ্রহের দরজা সবসময় খোলা। তিনি শুধু অপেক্ষা করেন বান্দা কখন তাঁর দিকে ফিরে আসবে।
এক হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন—বান্দা তওবা করলে আল্লাহ যে আনন্দ অনুভব করেন, তা সেই পথহারা মানুষের আনন্দের চেয়েও বেশি, যে মরুভূমিতে হারানো সওয়ারী ও খাদ্য আবার ফিরে পেয়ে জীবন ফিরে পায়। (মুসলিম)
ইসলাম মানুষকে জন্মগতভাবে পবিত্র বলে ঘোষণা করে। তাই পাপ বা ভুল হয়ে গেলে হতাশ না হয়ে, আল্লাহর দিকে ফিরে আসাই হলো মুক্তির পথ।

